স্মরণকালের বড় সমাবেশে বিজয় স্মরণীয় করার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল শনিবার আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় বিজয় উদযাপন করতে এ সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।

এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দুপুর আড়াইটায় মহাসমাবেশ শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে চলছে কর্মব্যস্ততা। পুকুরের পূর্ব পাশে নৌকা আকৃতির বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। দক্ষিণমুখী মঞ্চের সামনে মাঠের মাঝে ছোট ছোট নৌকা রাখা হয়েছে।

দলীয় প্রতীক নৌকার পালে পালে লেখা ‘জয় বাংলা’ ও ‘বাংলার জয়’। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ সরকারের উন্নয়ন ও অর্জনের তথ্য সংবলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার লাগানো হয়েছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের রাস্তায় দলীয় নেতাকর্মী ও ঢাকার সংসদ সদস্যদের কারও কারও ছবি ফেস্টুনে দেখা গেছে। উদ্যানের মাঠ ও এর আশপাশে বৃহস্পতিবার দিনভর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।

সকালে দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীদের নিয়ে মহাসমাবেশের স্থান পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মধ্যে একদিন বাকি। মঞ্চ, সাজসজ্জা, প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন শাখা এবং পার্টির নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে যে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে শনিবারের মহাসমাবেশের মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে দেখা যাবে বলে মন্তব্য করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে আমাদের বিশাল বিজয় হয়েছে। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করে আমরা এ বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে চাই। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ছাড়াও এর পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে মহাসমাবেশে আনার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।

বাস, ট্রাক ও রেলপথে নেতাকর্মী ঢাকায় এসে বর্ণিল মিছিল সহকারে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে সমবেত হবেন। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের দলীয় এমপিরা মিছিল সহকারে মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী সব শ্রেণী-পেশার মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা।

মহাসমাবেশ সফল করতে ঢাকা জেলা ও পার্শ্ববর্তী গাজীপুর, গাজীপুর মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উল্লিখিত জেলার সব উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রদের একাধিক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ আলাদা বর্ধিত সভা করেছে। এসব সভায় ওবায়দুল কাদের মহাসমাবেশ সফল করতে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

সমাবেশ সুশৃঙ্খল করতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, সমাবেশে আমাদের প্রমাণ করতে হবে আমরা সুশৃঙ্খল একটি দল। উৎসবমুখরভাবে সমাবেশে উপস্থিত হবেন। তবে সমাবেশস্থলে প্রবেশের আগে ফেস্টুন-ব্যানার বাইরে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, পুরো রাস্তা দখল করে মিছিল করা যাবে না। এক পাশ ফাঁকা রেখে মিছিল করতে হবে। রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে মহাবিজয়ের মহাদাপট দেখাচ্ছে এমন যেন না হয়। সহিষ্ণু হতে হবে। বড় বিজয়ের সঙ্গে এটাও বড় দায়িত্ব।

জানা গেছে, মহাসমাবেশে প্রবেশের পথের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। নারীদের জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া এবার টয়লেটের সংখ্যায়ও বাড়ানো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বেলা ২টার মধ্যে সমাবেশস্থলে পৌঁছাতে হবে। সমাবেশ শেষ না হওয়া বা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা সমাবেশস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। এদিকে সমাবেশের দিন সকাল থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সমন্বয় করবেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

বেলা ১১টা থেকে সমাবেশের প্রবেশের জন্য খুলে দেয়া হবে। বেলা ১২টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। দেশবরেণ্য শিল্পীরা নাচ-গানের মাধ্যমে প্রাণবন্ত করে রাখবেন সমাবেশস্থল। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেন, জয় বাংলার গান, স্বাধীনতার গানের মাধ্যমে শুরু হবে অনুষ্ঠান। এছাড়া এবারের নির্বাচনী থিম সংয়ের দ্বিতীয় ভার্সনে ‘জিতেছে এবার নৌকা’ উপস্থাপন করা হবে। অনুষ্ঠানে গান গাইবেন শিল্পী মমতাজ বেগম, রফিকুল ইসলাম, চন্দনা মজুমদার, আঁখি আলমগীর, জলের গান ব্যান্ড। সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিবেদন করে ‘আপনার জন্ম একটি নতুন সময়ের ইঙ্গিত’ কবিতা আবৃত্তি করবেন কবি রাশেল আশেকী।

বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা : আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশ উপলক্ষে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানী ঢাকার কোন সড়কে যান চলাচল করবে, কোন পথে করবে না, গাড়ি পার্কিং স্থান কোথায় হবে-সে ব্যাপারে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ডিএমপির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গাবতলী, মিরপুর সড়ক হয়ে আগত ব্যক্তি যানবাহনে সায়েন্সল্যাব-নিউমার্কেট হয়ে নীলক্ষেতে নামবেন। এরপর হেঁটে টিএসসি হয়ে বিভিন্ন গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করবেন। তাদের বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বর এবং নীলক্ষেত থেকে পলাশী পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে এক লাইনে পার্কিং করবে।

উত্তরা থেকে এয়ারপোর্ট সড়ক হয়ে মহাখালী-মগবাজার-কাকরাইল চার্চ-রাজমণি ক্রসিং-নাইটিঙ্গেল-পল্টন মোড়-জিরো পয়েন্ট অথবা খিলক্ষেত ফ্লাইওভার-বাড্ডা-গুলশান-রামপুরা রোড-মৌচাক ফ্লাইওভার-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজমণি ক্রসিং-নাইটিঙ্গেল হয়ে পল্টন মোড় বা জিরোপয়েন্টে বাস থেকে নামতে হবে।

পরে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানের বিভিন্ন গেট দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। তাদের বহনকারী বাস মতিঝিল এলাকায় পার্কিং করতে হবে। এ এলাকায় বাস পার্কিংয়ের জায়গা সংকট হলে প্রয়োজনে হাতিরঝিল এলাকায় পার্কিং করা যেতে পারে।

পূর্বাঞ্চল থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে এবং দক্ষিণাঞ্চল থেকে পোস্তগোলা হয়ে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আসা বাস গুলিস্তানে থামবে। এসব বাসে আসা ব্যক্তিরা হেঁটে জিরো পয়েন্ট-দোয়েল চত্বর হয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাবেন। বাসগুলো মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় পার্কিং করতে হবে। যারা মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চানখাঁরপুল হয়ে আসবেন তারা চানখাঁরপুল নেমে হেঁটে দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানে যাবেন। তাদের বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়াম মাঠে পার্কিং করতে হবে।

বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে আগত ব্যক্তিরা গোলাপশাহ মাজারে নেমে হেঁটে হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর হয়ে উদ্যানে যাবেন। তাদের বাস গুলিস্তান এলাকায় পার্কিং করতে হবে। শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন পর্যন্ত সড়ক সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য বন্ধ থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারদিকের রাস্তায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

অনুষ্ঠাস্থ’লে প্রধানমন্ত্রীসহ গণমান্য ব্যক্তির গমনাগমন উপলক্ষে ওইদিন ভোর থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশের বিভিন্ন ইন্টারসেকশন-বাংলামটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার, চানখাঁরপুল, গোলাপশাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টো রোড ক্রসিং থেকে গাড়ি ডাইভারশন দেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। যারা অনুষ্ঠানে আসবেন, তাদের কোনো প্রকার হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, দাহ্য পদার্থ বা ধারালো কোনো বস্তু বহন না করার অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া অনুষ্ঠানস্থল এবং এর আশপাশের এলাকা দিয়ে ভারি বা হালকা যানবাহনসহ যাতায়াত পরিহার করার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।