‘রাজাকার’ দেশপ্রেমিকের অপর নাম: সুস্ময় শরিফ

প্রকাশিত: ৫:৪৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৬, ২০১৯

ছোটবেলা থেকেই ‘রাজাকার’ শব্দটিকে আমি চরম ঘৃণা করতাম, আমার চরম অপছন্দের শব্দটি ছিল ‘রাজাকার’। আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন রাজাকার শব্দটি শোনামাত্রই আমি রেগে যেতাম আর আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। ভাবতাম, যদি রাজাকারকে কখনো কোথাও পাই তাহলে তাকে ধোলাই করবো। এমনই ঘৃণিত আর অপছন্দের শব্দ ছিল ‘রাজাকার’। কিন্তু বর্তমানে আমরা যে সময়ে, যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছি, এ সময়ে রাজাকার একটি বিউটিফুল শব্দ। কেননা আজ যাদের রাজাকার খেতাব দেয়া হচ্ছে আদৌ তাদের বয়স ৪০ হয়নি। না তারা ৭১ এর যুদ্ধ দেখেছে, না তারা যুদ্ধাপরাধী! তারা কোনো অন্যায়ের সাথে জড়িত না। আজ যাদের রাজাকার খেতাব দেওয়া হচ্ছে, তারা সবাই ধার্মিক-আদর্শবান। তারা সবাই দেশকে ভালবাসে, দেশের পক্ষে কথা বলে, গণতন্ত্রের কথা বলে। তারা সুদ খায়না ঘুষ খায়না, তারা কারো দালালি করেনা।

আজকের রাজাকারের সংজ্ঞা হল, “সীমান্তে ভারত একের পর এক হত্যাকান্ড চালাচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবাদ করা, ফেলানি হত্যার বিচার চাওয়া, দেশে লুটপাট, চুরি-ছিনতাই, ধর্ষণ, শেয়ার বাজার লোপাট নিয়ে মুখ খোলা, ভোটাধিকার চাওয়া, তিস্তা সমাধান চাওয়া, সীমান্ত হত্যা বন্ধে সুষ্ঠু সমাধান চাওয়া,দিনে-দুপুরে মা-বোন ধর্ষিতা হচ্ছে, খুন হচ্ছে তার প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় ‘রাজাকার’ খেতাব।

রাস্তায় লাশের মিছিল চলছে কিন্তু নিরাপদ সড়কের দাবি করলেই সে রাজাকার। দাড়ি রাখা, ইসলামি পোশাক পরিধান করা, নামাজ-রোজা করলে পাচ্ছে রাজাকার খেতাব। আজ চামড়া শিল্প, পাটশিল্প, পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে কথা বললেই বনে যাচ্ছে রাজাকার। মোটকথা, যাবতীয় অন্যায়-অবিচার, দুর্নীতি ও জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে রাজাকার বলে”।

অপরদিকে যে চুপ থাকে সে বনে যায় দেশপ্রেমিক। দেশে শান্তি থাক বা না থাক, ন্যায়বিচার না থাক, ভারতীয় মাদকে দেশ ডুবলে ডুবুক, শেয়ার বাজার ছয়লাপ তাতে অসুবিধা কি? চুপ থাকলেই দেয়া হচ্ছে দেশপ্রেমিকের সীলমোহর, পাচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা। আজ যে মাদকাসক্ত, নেশা করে রাস্তায় পরে থাকে, ভিনদেশিদের পা চেটে যাচ্ছে যারা তারাই হলো দেশপ্রেমিক।

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন সাহেবের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ভিনদেশি সংগঠনগুলো কিভাবে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার মিশনে নেমেছে, কিভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের নীলনকশা তৈরি করছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। আর এই বিষয়ে যদি কেউ কথা বলে, তখন সে হয়ে যায় রাজাকার, জঙ্গি।

মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক যারা কোনো অপরাধ করেনা, যারা দেশ-সমাজ নিয়ে চিন্তা করে, দাড়ি-টুপি আছে নামাজ-কালাম ঠিকমত আদায় করে, ঘুষ খায়না দুর্নীতি করেনা তাদেরকেও আজ ভাল মানুষ হিসেবে পরিচয় দেয়ার কোনো উপায় নাই। তারাও পেয়েছে ‘রাজাকার’ বা ‘জঙ্গি’ খেতাব। তার কারণ, তাদের অনেকেই রাজনীতি করেনা, আবার কেউ করলেও কোনো নেতার গোলামি করেনা। কারো পা চাটেনা। কোনো নেতার কাছে তারা করুণা চায়না। তারা সাহায্য চায় আল্লহর কাছে। অতএব তারা রাজাকার, জঙ্গি।

আজকে আমরা যে অবস্থানে আছি, সেখানে যদি কেউ চুপ থাকে তবে সে দেশপ্রেমিক আর বাধা দিলে রাজাকার। দেশের যারা অভিভাবক, যারা দেশের দায়িত্বে আছেন তারা যখন অন্যায়ে জর্জরিত, তখন কেউ কোনো কথা বলতে পারবেনা। বললে সে রাজাকার। কাস্মীরের মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালাচ্ছে ভারত আর বাংলাদেশের মুসলিমসহ ৯৫% মানুষ যেখানে কাস্মীরের স্বাধীনতা কামনা করছে সেখানে মুসলিম নামধারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আমরা ভারতের পাশে থাকবো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ৯৫% মানুষ সবাই রাজাকার। কেউ পারবেনা কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে। পারবেনা কেউ মানবতার পক্ষে থাকতে। যদি কেউ কাস্মীরের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাহলে তাদের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে নিজেকে দেশপ্রেমিকের পরিচয় দেয়ার ব্যর্থচেষ্টাও করেছেন র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ।

সুতরাং আমি মনেকরি, বর্তমান সময়ে রাজাকার হওয়া অনেক সম্মানের ব্যাপার, অনেক যোগ্যতার ব্যাপার। আজকের রাজাকাররাই পারে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গড়তে। ‘রাজাকার তোমরা গৌরবিত, তোমরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক’