বঙ্গবন্ধু-জিয়াকে নিয়ে টানাটানি করবেন না: জাফরুল্লাহ

প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২১
ছবি: বিপ্লব দিক্ষিৎ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আর টানাটানি করবেন না। তাদের শান্তিতে থাকতে দিন।’

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে গণসংহতি আন্দোলনের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞানচক্ষু খুলে গেছে। সাহসের সঙ্গে, সততার সঙ্গে উনি নিজের দলের দিকে তাকাতে পেরেছেন, উনি বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি যখন আক্রান্ত হয়েছিল, তখন বঙ্গবন্ধু তার দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে ফোন করেছিলেন। তিনি তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল রাজ্জাক, সেনাপ্রধান সফিউল্লাসহ আরও অনেককে ফোন করেছিলেন। উনি ফোন করে অনুনয় বিনয় করেছিলেন—আমার এখানে আসো, কী হচ্ছে তোমরা দেখো।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি তো বললেন না উনি (বঙ্গবন্ধু) জিয়াউর রহমানকে কেন ফোন করেননি? জেনারেল ওসমানীকে কেন ফোন করেননি? বিডিআরপ্রধান জেনারেল খলিলকে কেন ফোন করেননি? খালেদ মোশাররফকে কেন ফোন করেননি? সবচেয়ে বড় কথা যারা স্বাধীনতা এনেছিলেন, সেই তাজউদ্দীনকে কেন ফোন করেননি? সৈয়দ নজরুল ইসলামকে কেন ফোন করেননি। উনি কি বিব্রতবোধ করছিলেন?’

বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য পাকিস্তান দায়ী নয় উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দায়ী ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী। তার প্রমাণ, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী কয়েকদিন আগে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন—এটা (হত্যার পরিকল্পনা) হচ্ছে। তার মানে তারা জানত, তারা অর্গানাইজড করেছে। তখন তো পাকিস্তানিদের এখানে আসার কোনো সুযোগই ছিল না। ভারত বুঝতে পারে যে, বঙ্গবন্ধুকে সরাতে হবে।’

‘তার জন্য শুরু হয় রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার। রক্ষীবাহিনী কারণে পাকিস্তান থেকে আগত সৈন্যরা, মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণকারী সৈন্যরা সবাই বঙ্গবন্ধুর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। সেদিন বঙ্গবন্ধু পাশে যারা দাঁড়াতে পারতেন, তাদের কেউকে তিনি ডাকেননি’ যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা ইতিহাস ভুলে গেছেন উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এখন উনি (শেখ হাসিনা) বলতে শুরু করেছেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের মরদেহ নাই। উনি কী করে জানলেন? তার বডি যারা রিসিভ করেছিলেন, তাদের অনেকই বেঁচে আছেন, অনেকেই আবার বেঁচে নেই। তার পোস্টমর্টেম করেছিলেন ডা. তোফায়েল। তিনি এখনো বেঁচে আছেন। সর্বকালের বৃহৎ জনসমাগম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের দেহ যখন মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আনা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ হঠাৎ এসব তথ্য কেন আনছেন? এটা অনেকাংশে মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) ওপর এত মানুষিক চাপ-অত্যাচার। আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন, চিকিৎসা প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে টানাটানি করবেন না। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে টানাটানি করবেন না। তাদেরকে শান্তিতে ঘুমাতে দেন।’

গণসংহতির ঢাকা মহানগর সমন্বয়কারী মনির উদ্দীন পাপ্পুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আবুল হাসান রুবেল, গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তাছলিমা আক্তার, শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাচ্ছু ভূঁইয়া, গণসংহতি আন্দোলনের জুলহাস নাইন বাবু প্রমুখ।