ঢাবির হলে পলেস্তারা খসে পড়ে ২ শিক্ষার্থী আহত

প্রকাশিত: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে একটি ভবনের পলেস্তারা খসে দুই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রোববার (২৪ নভেম্বর) ভোরে হলের হল সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থীরা হলেন- ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনসুরেন্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সুবল কিস্কো, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে মার্স্টাস অধ্যয়নরত এডওয়ার্ড সরেন। তারা সাঁওতাল নৃগোষ্ঠীর সদস্য। তাদের দুজনের বাড়ি রাজশাহী জেলায়। আহত দুই শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

 

হলে জায়গার সংকলন থাকায় হলের সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একসঙ্গে অধিবাসী ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে। অন্যান্য দিনের মতোই শনিবার দিবাগত রাতে নিত্যদিনের কাজ-কর্ম শেষে ঘুমিয়ে যায় জগন্নাথ হলের সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলার শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে গেলে ভোরের দিকে হঠাৎ উপর থেকে পলেস্তারা খসে নিচে দুজন শিক্ষার্থীর পায়ে পড়ে। এতে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত সুবল কিস্কোকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়।

জানা গেছে, হলে জায়গার সংকুলান না থাকায় হলের সংসদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় একসঙ্গে ৪০ জন আদিবাসী শিক্ষার্থী থাকেন। অন্যান্য দিনের মতোই শনিবার দিবাগত রাতে নিত্যদিনের কাজ শেষে ঘুমিয়ে যান সেখানকার শিক্ষার্থীরা। তারা ঘুমিয়ে গেলে ভোরের দিকে হঠাৎ ওপর থেকে পলেস্তারা খসে নিচে শিক্ষার্থীদের পায়ে পড়ে। এতে দুজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত সুবল কিস্কোকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়। এক্সরে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সুবল কিস্কোর ডান পায়ের একটি আঙুল ভেঙে গেছে।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে দায়সারা বক্তব্যের অভিযোগ উঠেছে জগন্নাথ হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ওই ভবনে আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পলেস্তারা খসে পড়ার বিষয়টি হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল সাহাকে অবহিত করলে তিনি ঘটনার প্রতিকার না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ায় শিক্ষার্থীদের এ ভবন থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কোথায় থাকবে এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিষয়টি নিয়ে ওই ভবনের আবাসিক শিক্ষার্থী হিতো চাকমা বলেন, ‌‘আমরা আদিবাসী শিক্ষার্থীরা হলে জায়গা না থাকার কারণে ওই ভবনে বসবাস করছি। কিন্তু প্রায় সময়ই পলেস্তারা খসে পড়ে। শনিবার ভোরে পলেস্তারা খসে পড়ে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কিন্তু প্রশাসন দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে। প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, টাকার চেয়ে জীবন অনেক বড়। তোমরা বাইরে থাকতে পারো। কিন্তু তিনি আমাদের হলে ব্যবস্থা করে দিবেন এমন কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, আমার উপায় নাই। আমি নিরুপায়। আমি তোমাদের জায়গা দিতে পারছি না। এখন যদি আমাদের এ ভবন থেকে চলে যেতে হয় তাহলে আমরা কোথায় থাকবো?’

 

আহত শিক্ষার্থী এডওয়ার্ড সরেন বলেন, ‘ভোর আনুমানিক পাঁচটার দিকে পলেস্তারা খসে পড়ে আমরা দুজন আহত হই। পরে গুরুতর আহত সুবলকে ঢামেকে নিয়ে যায় আমাদের কয়েকজন বন্ধু। আমিও পায়ে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছি। তবে হল প্রশাসন বলেছে, তোমরা বাইরে থাকো, তোমরা এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেন থাকছো। তখন আমরা বললাম, স্যার আমরা কোথায় থাকব। আমাদের থাকার জায়গা নেই। তখন তিনি বলেন আমিও তোমাদের রুম দিতে পারছি না, তোমরা বাইরে থাকো।’

প্রাধ্যক্ষের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই শিক্ষার্থী বলেন, উনি (প্রাধ্যক্ষ) আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু আমরা কোথায় যাব? আমাদের থাকার কোনো জায়গা ঠিক না করে তিনি আমাদের এখান থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

ভুক্তভোগী পলেস্তারা পড়ে আহত হওয়া সুবল ও সরেন জাগো নিউজকে বলেন, আজকে পায়ের দিকে পলেস্তারা পড়ে যাওয়ায় আমরা জানে বেঁচে গেছি। কিন্তু এটা যদি আমাদের মাথার ওপরে পড়তো? আমরা কোনোভাবে মারা গেলে এর দায়ভার কি হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিত? তারা কি আমাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারতো? বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কি নিরাপত্তা দিচ্ছে? আমাদের জীবনের কোনো মূল্য নেই প্রশাসনের কাছে?

পলেস্তারা পড়ে আহত হওয়া দুই শিক্ষার্থীর কাউকেই তাৎক্ষণিকভাবে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সময় হল প্রশাসনের কেউ ছিল না। ঘটনা ঘটার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর আহত শিক্ষার্থীদের ফোন রিসিভ করেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহা। ফোন রিসিভ করার দুই ঘণ্টা পর তিনি শিক্ষার্থীদের দেখতে যান। তবে আহতদের কারো চিকিৎসা ব্যয় বহন করেনি হল প্রশাসন। চিকিৎসা ব্যয় বহন না করার বিষয়ে নিশ্চিত করেন আহত দুই শিক্ষার্থী।

তবে খরচ বহন করার বিষয়ে জগন্নাথ হল সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অবস্থা পরিদর্শন করেছি। হল প্রশাসন তাদের সকল চিকিৎসা খরচ বহন করেছে।

এ ঘটনার পর থেকে জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মিহির লাল সাহার সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়ে এবং হলে তার কার্যালয়ে গেলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে ১৩ অক্টোবর এই হলের একটি ভবন ধসে ৩৯ জন শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও অতিথি নিহত হয়। আহত হয় কয়েক শতাধিক। এরপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ অক্টোবরকে বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।