ডাকসু’র ভোটগ্রহণ আজ, অনিয়ম হলেই দুর্বার আন্দোলন

প্রকাশিত: ১:৪০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯

যে কোনো দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হলে পার হতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা, গান-বাজনা, আড্ডা, প্রেমসহ মুখর এক ক্যাম্পাস চোখে পড়বে আপনার। বহিরাগতদের ভিড় নেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জমে উঠেছে নির্বাচনী হাওয়া। যেন পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এক নান্দনিক রূপ পেয়েছে। ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আজ সোমবার।রোববার রাতে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্কের ছাপ চোখে পড়েনি। হলের সামনে শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো ছিল। টিএসসিতে বসে বন্ধুরা গান-বাজনা করছেন। প্রেমিক-প্রেমিকারা প্রেম করছেন। বন্ধুদের নির্বাচনী ধোঁয়া চা-তে গল্পের ফোয়ারা বয়ে চলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের হিসাব-কিতাব অঙ্ক তো আছেই। বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে না থাকায় ফাঁকা ক্যাম্পাসের ছবি তুলছেন শিক্ষার্থীরা। পাশ থেকে এক বন্ধু বলে উঠলেন, ‘তোল তোল, এমন মনোরম ক্যাম্পাস তো সব সময় পাবি না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে রোববার রাতে প্রশাসন মাইকিং করে।

অনেকেই এখানে সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন। এর ভেতরে ভোটারের কাছে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রার্থীদের ভোট চাওয়ার দৃশ্য আপনার চোখে আটকাবে। এ ছাড়াও কে কাকে ভোট দিবে, কে হচ্ছেন দীর্ঘ ২৮ বছর পর নবনির্বাচিত ভিপি, জিএস, এজিএস সেই অঙ্ক তো ক্যাম্পাসের ইটপাথরে মিশে গেছে। রোববার রাতে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে এ রকম আবহ এবং আলোচনা শোনা গেছে। এই হচ্ছে রোববার সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র।চারিদিকে ভোটের কড়া হিসাব-কিতাব চলছে, ২৮ বছর পর আজ সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতার চিন্তা করছে ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বামপন্থীদের প্যানেল প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য এবং স্বতন্ত্রসহ অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, মূলত লড়াইটা হবে কোটা সংস্কার আর ছাত্রলীগের ভেতরে।তবে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী একটু ভারি মনোভাব নিয়েই বললেন, ‘দেখা যাক কাল হয়তো সব ইকুয়েশন বদলে যেতে পারে। অনিয়ম হলে কোনো রকম ছাড় হবে না। ভালো কিছুই হোক সেই আশা প্রকাশ করছি। না হলে অন্দোলন হবে কঠোর।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে রোববার রাতে প্রশাসন মাইকিং করে।

কিন্তু বিজয় ছাড়া ভাবতে চাইছে না বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনোনীত ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয় পাব আমরা। আর ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম করে জেতার চেষ্টা করলে ভোট বাদ দিয়ে কাল থেকেই বিশাল এক আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটবে এই বাংলাদেশে। ভোট বাদ দিয়েই সকাল থেকেই আন্দোলন গড়ে তুলব।’ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন আবার বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ছাত্রলীগ কিন্তু উপরেই। হলের অধিকাংশ ভোট কিন্তু তাদেরই। ভোট সুষ্ঠু হোক, তবু আমরা জিতব। এখানে কোনো সন্দেহ নেই।’পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, কাল (আজ) ভোট। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভোট। খুব আগ্রহ নিয়ে তারা অপেক্ষা করছেন সকাল হওয়ার। এখনো পর্যন্ত যে পরিবেশ দেখছেন তাতে মনে হচ্ছে, ভোট সুষ্ঠু হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। তবে ছাত্রলীগ যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে সেই ভয় তো আছেই। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোট ডাকাতি বা কারচুপি করে কতটা সফল হওয়া যাবে সেই প্রশ্নও আছে সবার ভেতরে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে রোববার রাতে প্রশাসন মাইকিং করে।

এদের ভেতরে শফিকুল ইসলাম নামের সূর্যসেন হলের এক শিক্ষার্থী টাইমস বিডিকে বলেন, ‘ভোটের হিসাব বেশ জটিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা অনেকের ভোট পাবেন। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া কোটা বাতিল তো আছেই। অনেক ছাত্রলীগের ভোটও কিন্তু তারা পাবে। তবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আট হাজার পদধারী নেতা আছে বিভিন্ন কমিটিতে। এই ভোট বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম। হলে একক আধিপত্য তো আছেই। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় হলের ছাত্রীদের ওপর নির্যাতন কিন্তু মেয়েরা ভুলে যায়নি। ছেলেদের হলের তুলনায় মেয়েদের হলে কিন্তু ছাত্রলীগের ভোট কম। এদিকে বাম জোটের একটা ভোট ব্যাংক কিন্তু আছে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থক কিন্তু কম না। দেখা যাক। তবে আমার কেন জানি মনে হয়, ভোট সুষ্ঠু হলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জিতে যাবে। অন্য প্যানেল থেকেও হয়তো নির্বাচিত হতে পারে।’সাজু আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছি। এরপরও প্রশাসন কী ভূমিকা নেয় সেটা দেখার বিষয়। মারামারি হামলা হবে না সেটাও ভাবতে পারছি না। আমি ভালো প্রার্থী যে দলেরই হোক না কেন ভোট দিব তাঁকে। সব দল থেকেই নির্বাচিত হোক।’বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনোনীত ভিপি প্রার্থী নুরুল হক নুর বলেন, ‘ভোটে কোনো রকম অনিয়ম হলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব। ক্যাম্পাসের নির্বাচনকে সংসদ নির্বাচন ভাবলে ভুল হবে। এখানে অনিয়ম করে কোনোভাবেই পার পাবে না কেউ। কঠোর আন্দোলন হবে। সেটা কাল থেকেই। আর সুষ্ঠু ভোট হলে তো কথা নেই। আলহামদুল্লিলাহ। ভোট ডাকাতি হলে ছাত্রলীগ বাদে সব দল মিলে কঠোর আন্দোলনে যাব আমরা। সেই চুক্তি আমাদের সবার সাথেই করা হয়ে গেছে। দেখা যাক, কাল কী হয়।’ছাত্রলীগের তো আট হাজার পদধারী নেতাই আছে সারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পদে। তাদের তো অনেক ভোট, কী মনে করছেন- এমন প্রশ্নে নুর বলেন, ‘আমিও তো ছাত্রলীগের পোস্টেড নেতা। আরো অনেক পোস্টেড নেতা কিন্তু আমাদের সাথে আছে। সেই ভোট তো আমরা পাব। আমাদের অনেক ভোট।’