কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি জালভোট, ভোটগ্রহণ স্থগিত

প্রকাশিত: ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তাভর্তি জালভোট পাচারের অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা।

সোমবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলবে একটানা দুপুর ২টা পর্যন্ত।

কুয়েত মৈত্রী হলের কিছু ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, ব্যালটবাক্স আগে থেকেই জালভোট দিয়ে ভরা হয়েছিল। পরে ব্যালটবাক্স দেখতে চাইলে সেই জালভোট দেয়া ব্যালট পেপার বস্তায় ভরে অন্যত্র সরানোর অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রীরা।

মৈত্রী হলের ছাত্রীরা ভোটকেন্দ্রের সামনে জালভোট দেয়া ব্যালট পেপার নিয়ে দাঁড়িয়ে অভিযোগ করছেন, বর্তমান প্রশাসনের অধীনে কখনই সুষ্ঠু ভোট হওয়া সম্ভব নয়।

এক ছাত্রী বলেন, ব্যালটবাক্স স্টিলের তৈরি হওয়ার কারণে আমরা সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে সেটি চেক করে দেখতে চাই। কিন্তু হলের প্রভোস্ট শবনম জাহান আমাদের সেটি দেখতে দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এ রকম কোনো নিয়ম নেই। পরে অন্যান্য হলে দেখানো হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, প্রক্টর এলে সেটি দেখানো হবে।

পরে প্রক্টরিয়াল বডি এলে ভোটকেন্দ্রের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়, আর আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন কথা বলে ব্যস্ত রাখা হয়।

এভাবে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আমরা কয়েকজন অনেকটা জোর করেই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি। ভোটকেন্দ্রে একটি প্রধান দরজা আর পেছন দিকে আরেকটি দরজা ছিল। যার মাধ্যমে বাইরের দিক থেকে আসা-যাওয়া করা যেত।

গতকাল আমরা ওই দরজা বন্ধ করার আবেদন জানালে প্রভোস্ট শবনম জাহান আমাদের নিজেদেরই সেটি বন্ধ করে দিতে বলেন। পরে আমরা একটি বড় তালা এনে সেটি বন্ধ করে দিই এবং চাবি আমাদের কাছে রাখি।

কিন্তু আজ আমরা যখন ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করি, তখন দেখি ওই তালাবদ্ধ দরজাটি খোলা। কিন্তু চাবি আমাদের কাছেই আছে।

ওই দরজা দিয়ে দেখি জালভোট ভর্তি একটি বস্তা। আরও সামনে এগিয়ে বাথরুমে গিয়ে দেখি আরও কয়েকটি জালভোট ভর্তি বস্তা।

পরে ছাত্রীরা হলগেটে দাঁড়িয়ে জাল ব্যালট মাটিতে বিছিয়ে প্রতিবাদ জানান।

চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম মাসুদুর রহমান বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আমরা ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছি।

এ নির্বাচনে মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৬ জন। ডাকসুতে ২৫টি পদের জন্য লড়ছেন ২২৯ প্রার্থী। আর ১৮টি হল সংসদে ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী ৫০৯ জন।

ডাকসুতে প্যানেল দিয়ে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মুক্তিজোট, জাতীয় ছাত্রসমাজ ও বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীও রয়েছেন।

চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১জন; তাদের সঙ্গে এই নির্বাচনে ১৪ জন লড়বেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৩ জন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে।

১২টি প্যানেলের বাইরে ভিপি পদে ৯ জন এবং জিএস পদে ২ জন স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে লড়বেন। কেন্দ্রীয় ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও ছাত্র সমাজ।

ক্ষমতাসীন ১৪ দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা সে অবস্থানে থাকেনি। ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী আলাদা প্যানেল দিয়েছে।

ছাত্রলীগ থেকে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

অন্যদিকে ভিপি পদে সংগঠনের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস পদে জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম-আহবায়ক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক এবং এজিএস পদে বঙ্গবন্ধু হল শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সোহেলকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল।

বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের ১১টি সংগঠন মিলে একটি প্যানেল দিয়েছে।

তাদের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। জিএস প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের ফয়সাল মাহমুদ সুমন এবং এজিএস প্রার্থী হচ্ছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক।