সোনাগাজীর সেই মাদ্রাসার ৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, ৬ শিক্ষককে শোকজ

প্রকাশিত: ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০১৯

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে ৬ আলিম পরীক্ষার্থী ও ৬ শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।

শনিবার দুপরে বালাগাত মান্তিক (যুক্তিবিদ্যা) পরীক্ষা চলাকালে এ আদেশ দেয়া হয়। এ সময় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার নবনির্বাচিত এডহক কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুজন চোধুরী উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্র সচিব নূরুল আফছার ফারুকী জানান, ওই দিন বালাগাত মান্তিক (যুক্তিবিদ্যা) পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার চারজন ও বখতারমুন্সি ফাজিল মাদ্রাসার দুজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন মোকাদ্দাস হোসেন, হাবিবুর রহমান, আবদুল মোতালেব, তাজুল ইসলাম, নুর নাহার ও তাসলিমা আক্তারকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রে দায়িত্বরত ৬ শিক্ষককে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষায় অসদুপায়ের ‘আঁতুড় ঘরে’ পরিণত হয়। এ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিরাজ উদ্দৌলা অনিয়মের ‘আখড়ায়’ পরিণত করেন।

উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসাধু শিক্ষকদের সঙ্গে আঁতাত করে কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের অনিয়মের সুযোগ করে দিতেন সিরাজ। ফলে এ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রেও প্রভাব বিস্তার করে অনিয়ম করত।

দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বই নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ ও প্রকাশ্যে নকলের সুবিধা আদায় করে নিত শিক্ষার্থীরা। কোনো শিক্ষক সিরাজ উদ্দৌলার নির্দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করলে তাকে নানাভাবে হেনস্তা করা হতো।

শনিবার ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ৪ শিক্ষককে শোকজ করার পর ফের আলোচনায় আসে মাদ্রাসাটি।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের পর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতি ও অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার দৌরাত্ম্য সম্পর্কে জানা যায়।

মাদ্রাসা কমিটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পছন্দের লোকদের বসাতেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা। দুই দশক আগে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া সিরাজ উদ্দৌলা যে দল ক্ষমতায় থাকেন সে দলে প্রভাবশালীদের নিয়ে মাদ্রাসায় আধিপত্য বিস্তার করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রে শোকজ পাওয়া এক শিক্ষক বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় পরীক্ষার সময় দায়িত্ব পালন করে আসছি। বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষার হলে অনেকটা অসহায়ের মতো দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অসদুপায়ের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চাইলে সিরাজ উদ্দৌলার রোষানলে পড়তে হয়। কয়েকজন ছাত্রকে লেলিয়ে দিয়ে পরদিন আমার অধ্যক্ষকে ডেকে ভৎর্সনা করেন সিরাজ উদ্দৌলা। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে আমাকে বেশ কয়েকদিন পরীক্ষায় দায়িত্ব নিতে দেননি আমাদের অধ্যক্ষ।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সুজন চৌধুরী জানান, পরীক্ষার হলে নকলে ছড়াছড়ি দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। পরবর্তীতে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও ৬ শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এ কেন্দ্রটি নকলের ‘আঁতুড় ঘরে’ পরিণত হয়েছিল বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসাকেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা ৫ দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান নুসরাত।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার এজহারভুক্ত ৮ আসামিসহ এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।