যোগাযোগ ব্যবস্থায় এরশাদের অবদান অবিস্মরণীয়

প্রকাশিত: ২:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০১৯

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)।রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

 

তিনি একজন দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক ও সেনাপ্রধান ছিলেন। প্রশাসক ও কবির স্বপ্ন একসঙ্গে একাকার হয়ে ছিল বলেই তিনি হতে পেরেছেন গতিশীল, আধুনিক ও মানবতাবাদী মনের মানুষ।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনানায়ক থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েই তিনি বললেন, ৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। বাংলার মানুষ তাই তাকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে উপাধী দিয়েছে পল্লীবন্ধু।

ক্ষমতা গ্রহণ করে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করতে পারলে অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব নয়।

 

এজন্য এরশাদ অসংখ্য রাস্তা, পুল, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করেছেন, যা এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তা পাকা করেছেন এবং দেড় হাজার ছোট বড় সেতু নির্মাণ করেছেন।

তিনি মহানন্দা, ঘাঘট আর নাগর নদীতে সেতু নির্মাণ করেছেন। নির্মাণ করেছেন মেঘনা সেতু, কর্ণফুলী সেতু, বুড়িগঙ্গা সেতু, রামপুরা সেতু, টঙ্গী সেতু, টেকেরহাট সেতু, শম্ভুগঞ্জ সেতু, কামার খালী সেতু, বান্দরবনে সাংগু সেতু, পঞ্চগড় সেতু, সিলেটে শাহজালাল-লামা কাজী সেতুসহ, অসংখ্য সেতু।

এরশাদ রাজধানীকে যানজট মুক্ত রাখার জন্য করেছেন রোকেয়া সরণী, প্রগতি সরণী, মুক্তি সরণী, বিজয় সরণী, পান্থপথ, জনপথ, নর্থ সাউথ রোড, সোনারগাঁ রোড, লিংক রোডসহ অসংখ্য রাস্তা। রাজধানীতে একমাত্র ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সায়দাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী ৩টি বড় বাসস্ট্যান্ড তৈরি করেছেন।

এরশাদ ৬০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯০ ফুট প্রশস্ত নগরবাড়ী-রংপুর এবং পল্লীবন্ধু দিনাজপুর-পঞ্চগড় সড়ক নির্মাণ করেছেন।

তিনি এরশাদ ৪টি ডিসি-১০ বিমান ক্রয় করে অত্যন্ত নাজুক অবস্থা থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিমানকে সম্প্রসারিত করেছেন। অভ্যন্তরীন বিমান ব্যবস্থায় ২টি এটিপি ক্রয় এরশাদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আন্তঃনগর ট্রেন ব্যবস্থা চালু করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছন। এছাড়া ডিজিটাল সিস্টেমসহ দেশে বিদেশে সরাসরি টেলিযোগাযোগে আধুনিকায়নের সূচনাও করেছেন তিনি।

যোগাযোগ উন্নয়নে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বেশকয়েকটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। যদিও কোনোটাই বাস্তবায়ন করতে পারেননি তবুও বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের উদ্যোগ তিনিই প্রথম গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেতু এক্ষেত্রে উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।

এছাড়াও এরশাদ আরও গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। যদিও সেগুলোর কোনোটাই তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এজন্যই এরশাদের ৯ বছরের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের কোচবিহার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি দেশে উপজেলা পদ্ধতি চালুসহ ৯ বছরের শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়ন করেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এর পর গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ থাকেন।

কারাগারে থেকেই রংপুরের পাঁচটি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হন তিনি। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে রংপুর থেকে কোনো নির্বাচনেই হারেননি পল্লীবন্ধু এরশাদ।

দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল ছিল তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। একাদশ জাতীয় সংসদেও জাতীয় পার্টি প্রধান বিরোধী দলের আসনে। দশম জাতীয় সংসদে এরশাদ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদমর্যাদায় ছিলেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদে বসান।