কাউন্সিলে নেতা নির্বাচন

যুবদল-স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সবখানে ভোটের হাওয়া

প্রকাশিত: ৪:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯

সরাসরি ভোটে নেতা নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রাথমিকভাবে সফল বিএনপির হাইকমান্ড। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দীর্ঘ ২৭ বছর পর ভোটে ছাত্রদলের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। এবার নজর যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের দিকে। সরাসরি ভোট ছাড়া কোনো কমিটি হবে না- সব স্তরে বিএনপির হাইকমান্ডের এমন বার্তার পর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর মধ্যে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিচ্ছেন প্রস্তুতি।

 

এদিকে হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনার পরও একটি সিন্ডিকেট ভোটের পরিবর্তে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার তোড়জোড় শুরু করেছে। নিজেদের আশীর্বাদপুষ্টদের শীর্ষ পদে আনতে হাইকমান্ডকে নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। সমঝোতার মাধ্যমে কৃষক দল ও তাঁতী দলের কমিটি করতে ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে ওই সিন্ডিকেট।

সম্প্রতি ফেনী জেলা কমিটি গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা এক বৈঠকে মিলিত হন। কোন্দলের কারণে জেলার কমিটি করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সব গ্রুপকে সমন্বয় করে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করার প্রস্তাব দেন কেউ কেউ। বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপেতে যোগ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সবার মতামত শোনার পর তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সমঝোতার মাধ্যমে কোনো কমিটি হবে না। এমন নির্দেশ পেয়ে নীতিনির্ধারকরা নড়েচড়ে বসেছেন।

এদিকে দলের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয়ভাবে গঠিত পাঁচটি কমিটি সারা দেশে নেতাদের অনিয়ম তুলে আনতে কাজ শুরু করেছে। তৃণমূলের কমিটি করার ক্ষেত্রে এসব অনিয়ম প্রতিবেদন আকারে কেন্দ্রে জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁতী দলের বিরুদ্ধে কমিটি গঠন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পেয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। অন্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোর অনিয়মও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যেসব অভিযোগ মিলেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিগত সময়ে কোনো কমিটিই কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হয়নি, কমিটি গঠনে আর্থিক অনিয়ম, ত্যাগীদের বাদ দিয়ে নিষ্ক্রিয় ও সুবিধাবাদীদের নেতৃত্বে আনা।

 

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলের মাধ্যমে আমরা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। এর মধ্য দিয়ে যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে এসেছেন। সংগঠনেও গতি আসছে। অন্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোয়ও কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি করা হবে। এর বাইরে আমরা আপাতত কিছু ভাবছি না।

সূত্র জানায়, অঙ্গ-সংগঠনগুলোর কমিটির ব্যাপারে দুটি বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে হাইকমান্ড। প্রথমত, ভোট ছাড়া কোনো কমিটি নয়। দ্বিতীয়ত, কাউন্সিলের পাশাপাশি এসব কমিটির সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া। দীর্ঘদিন এসব কমিটি একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারা সাংগঠনিক সম্পাদক বা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, তারাই পরে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হয়ে আসছেন। একই নেতৃত্ব দীর্ঘদিন থাকায় সংগঠনগুলো একটি বলয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

এসব বলয় ভাঙতে বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে। অঙ্গ-সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হবে না- এমন মত দিয়েছেন অনেকে। বিষয়টি হাইকমান্ডের চিন্তায়ও রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক না হলেও অন্তত সভাপতি নির্বাচন করতে পারবেন না- এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এসব অঙ্গ-সংগঠনে নতুন নেতৃত্ব আসবে এবং সংগঠন চাঙ্গা হবে বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দলসহ অঙ্গসংগঠনের কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ২৭ সেপ্টেম্বর মহিলা দলের মেয়াদ শেষ হয়েছে। মহিলা দলের কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে দুই দফা সংগঠনের নেতারা বৈঠকও করেছেন। বেশির ভাগ নেতা কমিটি ভেঙে দেয়ার পক্ষে। খুব শিগগিরই আরও একটি বৈঠক ডেকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২৭ অক্টোবর শেষ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ। প্রায় তিন বছর আগে সাত সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হলেও তা এখনও পূর্ণাঙ্গ হয়নি। যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ শেষ হবে জানুয়ারিতে। পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি দিয়েই চলছে সংগঠনটি।

সূত্র জানায়, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হতে পারে। এছাড়া বর্তমান কমিটির নেতৃত্বেই হতে পারে ভোট। সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলে প্রার্থী হতে পারবেন না।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, ছাত্রদলের পর অন্য অঙ্গ-সংগঠনের মধ্যেও ভোটের হাওয়া লেগেছে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হলে সংগঠনে গতি আসবে। তৃণমূলও উজ্জীবিত হবে। ভোটের জন্য তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, সবক্ষেত্রে ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে- এটাই দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ছাত্রদলের সফল কাউন্সিলের পর অন্য অঙ্গ-সংগঠনগুলোয় এ প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন করা হবে। ভোটে নেতা নির্বাচিত হবে- এমনটা ধরে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের উচিত এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নেয়া। সমঝোতা বা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে আর কোনো কমিটি ঘোষণা করা হবে না। কেউ যদি এমনটা ভেবে থাকেন তবে ভুল করবেন।