বাতিল হতে পারে পিইসি পরীক্ষা

প্রকাশিত: ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০২১

করোনার কারণে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেড় বছর বন্ধ ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শেষ করা সম্ভব হয়নি পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়মিত সিলেবাস। এ কারণে বাতিল হতে পারে পাবলিক পরীক্ষার আদলে চলতি বছরের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী (পিইসি-ইবতেদায়ি) পরীক্ষা। তবে সাময়িক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে স্কুল-কলেজে পাঠদান শুরু হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখন জ্ঞান অর্জনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তিন মাসের একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করে তা পড়ানো হচ্ছে। অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ও দুদিন করে ক্লাস নেওয়া হলেও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন দুটি বিষয়ের ক্লাস করানো হচ্ছে।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা বাতিল করায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বোর্ড পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা থেকে সরে এসেছে। বার্ষিক বা সাময়িক পরীক্ষা নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব টাইমস বিডিকে বলেন, আগের মতো পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা এবছর নেওয়া সম্ভব হবে না। সেই সময়ও আমাদের নেই, ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হতে পারে। এর সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বাসার কাজ দেওয়া হচ্ছে, সেটির ওপরও মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার সব প্রস্তুতি আমাদের আছে। শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি কমাতে আলাদা কেন্দ্র করে পরীক্ষা নেওয়াটা জরুরি নয়, বরং তাদের সুস্থতার জন্য যতটা কম সময়ে পাঠদান করানো সম্ভব তাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলে জাতীয় করোনা বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা ও মতামত নিয়ে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো যায় কি না সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

 

কেন্দ্র আলাদা না করে নিজ নিজ কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। সম্প্রতি তিনি টাইমস বিডিকে বলেন, অটোপাস দিলে সমাজে তার একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। প্রতিবেশী ও সমসাময়িকদের সঙ্গে মিশলে এসব নিয়ে কটাক্ষ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল ও আগ্রহ কমে যায়। এসব বিবেচনা করে হলেও সংক্ষিপ্ত আকারে পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষা নিয়ে আমরা সার্টিফিকেট দিতে চাই।

তিনি বলেন, গত বছর অটোপাসের ঘোষণা দেওয়ার পর এ ধরনের নানা অভিযোগ এসেছে। অটোপাস পাওয়া শিক্ষার্থীরা পরিণত হয়েছে হাসির পাত্রে। সে কারণে তিন মাসের একটি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পড়ানো হচ্ছে। সেটি শেষ হলে সাময়িক হোক আর আলাদা কেন্দ্রে হোক একটি গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা নিয়ে সার্টিফিকেট দিতে চাই আমরা।

জানা যায়, প্রতি বছর নভেম্বর মাসে জেএসসি, জেডিসি ও পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছর এ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তখন পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে ওঠার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল।

করোনা মহামারিতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হয়নি। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলায় এ বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা হওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তবে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার কারণে এ বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়।

গত সোমবার এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হয়। প্রকাশিত সময়সূচি অনুসারে, আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে এসএসসি ও সমমান এবং ২ ডিসেম্বর থেকে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে এ সূচি প্রকাশ করা হয়। এর আগে ১৪ নভেম্বর থেকে এবারের দাখিল পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মুনসুরুল আলম টাইমস বিডিকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষাকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা এলে রুটিন প্রকাশ করে পিইসি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের দেওয়া হয়নি। করোনার মধ্যে ২০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়াটাও অনেক কঠিন। সব বিষয় বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এসময় গত বছর পরীক্ষার সব প্রস্তুতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়।