বগুড়ায় করোনা কালেও চলছে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব

মিরাজুল ইসলাম মিরাজুল ইসলাম

জেলা প্রতিনিধি, বগুড়া

প্রকাশিত: ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২০

বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সবকিছু লকডাউন হলেও থেমে নেই বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে অসাধু ব্যবসায়ী ফলে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে নদীসহ আবাদি জমি। এসব জমিতে ফসলের ক্ষতিসহ নদী বিলীন হয়ে যাচ্ছে ভূগর্ভে। গাবতলী উপজেলার দক্ষিণপাড়া ইউনিয়নের সাগর ঘাটে কালভার্টের দু’পাশে দুটি মেশিন বসিয়েছেন তাজুল মেকার ও এনামুল হক গত এক মাস ধরে চলছে দুটি মেশিন, ফলে কালভার্টটি হুমকির মুখে। কালভার্টটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করে প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ। ফলে সারিয়াকান্দি, দহপাড়া, আট করিয়া, ভিটাপাড়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুরসহ আশেপাশের এলাকার লোকজন চরম বিপাকে পড়েছে।

বালু  উত্তোলনকারী তাজুল মেকারকে ফোন দিলে ব্রিজ হুমকির মুখে আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্রিজ তো আর কালকেই ভেঙ্গে যাবে না আপনি ছবি তুলেছেন নিউজ করেন ওসির সাথে কথা হয়েছে কোন সমস্যা নেই।

সেকেন্দার পাড়ার ড্রেজার মেশিনের কাছে গেলেই মেশিন বন্ধ করে পালিয়ে যায় শ্রমিকরা তবে স্থানীয়রা জানায় গত তিন মাস ধরে তিনটি মেশিন চালাচ্ছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী। এদিকে সোনাতলার বালুয়াহাট ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহেল ধরমকুল গ্রামে গত তিন মাস ধরে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন তবে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। দিগদাইড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মিনজুল ইসলাম কোয়ালি পাড়া গ্রামে তিনটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন প্রায় ৬ মাস ধরে তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন নিউজ করে কি করবেন থানার সাথে আমাদের কন্টাক্ট হয়েছে থানাতে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়। কাতলাহার বুড়ারদহ ব্রিজের পাশেই মনোয়ারুল ডাক্তার বালু তুলছেন প্রায় তিন বছর হল তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম বলেন। পুগিয়াদিঙ্গল কান্ধী গ্রামের বাদশা মিয়া গত কয়েক বছর ধরে বালু তুলছেন একনাগাড়ে। লোহাগাড়া গ্রামে একসাথে চারটি মেশিন বসিয়ে বালু তুলছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও  প্রভাবশালীরা ফলে সাংবাদিকদের ক্যামেরা দেখে তারা বলেন ছবি তুলে কি করবেন থানাতে প্রতিদিন টাকা দিতে হয়।

লোহাগড়া এলাকার বাসিন্দা খাজা মিয়া জানান, বালুর গাড়ি দিনরাত চব্বিশ ঘন্ট যাতায়াত করে, ফলে রাস্তার ধারগুলো নিচের দিকে ঢসে যাচ্ছে। বালু উত্তোলনকারিদের বললে বলে সরকারি রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাব তোমার সমস্যা কি এরকম উল্টো প্রশ্ন করেন।

একই এলাকার বাসিন্দা কল্পনা বেগম জানান, আমির স্বামী কৃষিকাজ করে। বালু তোলার কারণে ফসলি জমিগুলোতে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। জমিতে পানি দিলে ফাটল

দিয়ে পানি চলে যায় নদীতে। একারণে ফসলি জমি হুমকির মুখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলার কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতিসহ রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং বাঙালি নদী ভুগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বালু ব্যবসায়ীদেরকে নিষেধ করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব দেখিয়ে ভয়-ভীতি দেখানো হয়।

সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ এর সাথে কথা বলতে মুঠোফোনে তাকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি তবে বালু ব্যবসায়ীদের দাবি থানাকে ম্যানেজ করেই ব্যবসা করছেন তারা।