বিদেশে নেয়ার মত অবস্থায় নেই ওবায়দুল কাদের: ডা. আলী আহসান

প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০১৯

আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবাইদুল কাদের। ফাইল ছবি


হার্ট অ্যাটাক করা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। এ অবস্থায় তাকে বিদেশ নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আলী আহসান।

ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা আশঙ্কাজনক জানিয়ে বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য মো. শহীদুল্লাহ সিকদার রোববার দুপুরে বলেন, ‘উনার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। আমরা তাকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছি। তদুপরি তার পরিবার ও প্রধানমন্ত্রী চাইলে তাকে বিদেশে পাঠানো যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে ওবায়দুল কাদেরকে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ২ নম্বর বেডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সকালে এনজিওগ্রামের পর ওবায়দুল কাদেরের হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। তার হার্টে রিং পরিয়ে একটি ব্লক সচল করা হয়েছে। পরে তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন- আগামী ২৪ ঘণ্টা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

হাসপাতালটির কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান এনজিওগ্রাম শেষে সকালে বলেন, সেতুমন্ত্রীর এনজিওগ্রাম করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। এর মধ্যে একটি ওপেন করা হয়েছে। সকালের চেয়েও এখন শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে তার শারীরিক অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন, ৭২ ঘণ্টা না গেলে কিছুই বলা যাবে না।

সকালে এনজিওগ্রাম করার পর সেতুমন্ত্রীকে বিদেশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ সন্ধ্যা ৭টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়।

পরে দুপুরে এক বিফ্রিংয়ে বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান জানান, সিঙ্গাপুরে নেয়ার মত অবস্থায় নেই ওবায়দুল কাদের।

এ চিকিৎসক আরও বলেন, উনি আসার সঙ্গে সঙ্গে সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তখন রক্তচাপ স্টেবল ছিল না, আমরা সেটি স্টেবল করেছি। তিনি আরও বলেন, এনজিওগ্রামে ওবায়দুল কাদেরের হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি আর্টারি থেকে ব্লক অপসারণ করা হয়।

সকালে বিদেশ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে দুপুরে কেন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী আহসান বলেন, ‘যে কোনো মুহূর্তে উনার অবস্থা অবনতির দিকে যেতে পারে। এ কারণে তাকে বাইরে পাঠানোর কথা আমরা বলেছিলাম। আমাদের এখানেও ভালো চিকিৎসা হয়। তবে উন্নত চিকিৎসার যেহেতু শেষ নেই, সে কারণেই বিদেশে নেয়ার কথা বলা হয়েছিল।’

একটি ব্লক অপসারণের পর এখন ওবায়দুল কাদের কেমন আছেন, জানতে চাইলে কার্ডিওলজি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘উনি ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশনে আছেন। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না।’

এ সময় বিএসএমএমইউর প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কার্ডিওলজির প্রধান অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক বলেন, ওবায়দুল কাদের শঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা পর এ ব্যাপারে বলা যাবে।

এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ অসুস্থবোধ করলে ওবায়দুল কাদেরকে বিএসএমএমইউর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেয়া হয়। সেখান থেকে জরুরি ভিত্তিতে তাকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) নিয়ে ভর্তি করা হয়। পরে এনজিওগ্রাম শেষে ওবায়দুল কাদেরের হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ার কথা জানান চিকিৎসকরা।

সেতুমন্ত্রীর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, সকালে ফজরের নামাজ শেষে হঠাৎ করেই শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা অনুভব করেন মন্ত্রী মহোদয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসকরা তার মেডিকেল চেকআপ করেন। চেকআপ শেষে তাকে দ্রুত এনজিওগ্রাম করার পরামর্শ দেন। পরে এনজিওগ্রাম শেষে চিকিৎসকরা জানান তার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে।

তার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর দোয়া চেয়েছে আওয়ামী লীগ ও তার পরিবার।