পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান ছাত্রদলের

প্রকাশিত: ৫:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯

জালভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, কারচুরিসহ নানা অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন বাতিল চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থায় নিয়েছে ছাত্রদল।নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাও পুনঃনির্বাচন দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করছেন।

দুপুর ২টার দিকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রদল। একই সময়ে সিনেট ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চার প্যানেলের প্রার্থী ও সমর্থকরা।

চার প্যানেল হচ্ছে- বাম সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও স্বতন্ত্র জোট।

বিক্ষোভ থেকে কারচুপির নির্বাচন, জালভোটের নির্বাচন, প্রহসনের নির্বাচন মানি না এমন স্লোগান দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কারচুরির এ নির্বাচন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভিসির বাসভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এ সময় ‘প্রহনের নির্বাচন মানি না, মানব না’ স্লোগান দেন।

পুনঃতফসিল দাবিতে কাল থেকে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে প্যানেলগুলো। এ সময় সব ক্লাস বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে তারা।

এর আগে সোমবার দুপুর সোয়া ১টার মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় বাম সংগঠনগুলোর জোট প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ ও স্বতন্ত্র জোট। ছাত্রদলও তাদের সমর্থন দিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনও ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রহসন-জালিয়াতির এই নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে হবে। হলে নয়, নতুনভাবে ভোট হতে হবে একাডেমিক ভবনে। সেই নির্বাচনে ব্যালটবাক্স হতে হবে স্বচ্ছ।

পরে দুপুর দেড়টার দিকে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। এ সময় ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস প্রার্থী আনিসুর রহমান খন্দকার অনিকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। প্রশাসন শুরু থেকেই ভোট কারচুপিতে যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন হল থেকে সিল মারা ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়েছে। এভাবে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। আমরা এ নির্বাচন বর্জন করছি।

এর আগে দুপুর ১টায় প্রহসনের ভোট আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি ‘ঘৃণা’ জানিয়ে ডাকসু নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে চারটি প্যানেল। ওই চারটি প্যানেলের পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী বলেন, ভোটে অনিয়ম, কারচুপি, জালভোট ও ছাত্রলীগের অধিপত্য সর্বত্র। এই ভোট বর্জন করে নতুন তফসিল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি আমরা।

পরে এসব দাবি নিয়ে ভিসি ভবনে অবস্থান নিতে যান প্রার্থীরা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও পৃথক বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি ভবনে অবস্থান নিতে যান। সেখানে ভিসিকে না পেয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভিসির বাসভবনের সামনে এসে অবস্থান নেন ছাত্রনেতারা।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় ভিসির বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ চলছিল। গোটা ক্যাম্পাসে থেমে থেমে চলছিল। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল-স্লোগানে উত্তাল রেখেছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন ছাত্রনেতারা। তারা বলেন— প্রহসনের নির্বাচন ছাত্রসমাজ মানে না। এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন, যে ভিসি ছাত্রলীগের সেই ভিসি চাই না।

প্রসঙ্গত ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় ডাকসু নির্বাচন শুরু হয় সকাল ৮টায়। বেলা ২টা পর্যন্ত চলে ভোটগ্রহণ। এতে ৪৩ হাজার ২৫৬ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মোট ভোটারের মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৯৪৪ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ৩১২ জন।

ডাকসুতে ২৫ পদে নির্বাচন হচ্ছে। বিভিন্ন পদের মধ্যে আছে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে ৩টি। আরও আছে- সম্পাদকীয় ৯টি এবং ১৩টি সদস্যপদ। এসব পদের জন্য বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্রসহ প্রার্থী ২২৯ জন। তাদের মধ্যে স্বতন্ত্রসহ ভিপি ২১, জিএস ১৪ জন।

ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল। অন্যদিকে প্রত্যেক হল সংসদে ১৩টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। এর মধ্যে ভিপি, জিএস, এজিএস একটি করে তিনটি। আরও আছে সম্পাদকীয় ৬, সদস্য ৪টি। হল সংসদ (১৮টি হল, ২৩৪ পদে) প্রার্থী ৫০৯ জন। হল সংসদ ও ডাকসু মিলিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গড়ে ৩৮টি করে ভোট দিতে হয়। সুষ্ঠুভাবে ভোটের কাজ শেষ করতে রিটার্নিং অফিসারসহ (আরও) ৪২ জন কাজ করেন।