উত্তরে তাবিথ, দক্ষিণে বাবু আলোচনায়

ঢাকা মহানগর বিএনপিতে আসছে তরুণ নেতৃত্ব

প্রকাশিত: ৬:২০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২০

ভেঙে দেয়া হচ্ছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির কমিটি। সদ্যসমাপ্ত দুই সিটি নির্বাচনের পর দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, বর্তমান কমিটি দিয়ে আর চলছে না।

তারুণ্যনির্ভর কমিটি করতে হবে। যাতে তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে পারেন। নেতাকর্মীদের এমন চাহিদার কথা বিবেচনা করে তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে দুই সিটি পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, মহানগর কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের মতামত নেয়া হচ্ছে। প্রায় সবাই, দুই সিটির মূল নেতৃত্বে তরুণদের প্রাধান্য দেয়ার দাবি তুলছেন।

হাইকমান্ডকে এ ব্যাপারেও মতামতও দেয়া হচ্ছে। উত্তরে তরুণদের মধ্যে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন, সদ্যসমাপ্ত উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল, মহানগর নেতা বজলুল বাসিত আঞ্জু, যুবদল নেতা সাইফুল আলম নীরব, ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টি।

আর দক্ষিণে আলোচনায় আছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, সহসভাপতি নবীউল্লাহ নবী, সামসুল হুদা প্রমুখ।

জানতে চাইলে যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় আমার জন্ম। মহানগর রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি। মহানগর ছাত্রদলের পর যুবদল হয়ে এখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি। আমি মহানগরীতেই রাজনীতি করতে চাই। হাইকমান্ড সুযোগ দিলে আমি প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, মহানগরীতে তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা পরীক্ষিত এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বে আনা হলে সংগঠন গতি পাবে বলে আশা করি।

জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু বলেন, দল আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে কোনো দায়িত্ব দিলে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার চেষ্টা করব। মহানগরের গতি আনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহানগরের পাশাপাশি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব আনতে হবে।

বর্তমানে সবগুলো থানা ও ওয়ার্ডে যারা নেতৃত্বে আছেন তারা দীর্ঘদিন একই পদে রয়েছেন। এক সময় তারা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমানে নানা কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সেসব জায়গায় আমাদের নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে।

সব পর্যায়ের নেতাদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো কিছুতেই পূর্ণাঙ্গ সফলতা আসা করা যায় না। তাই মহানগরে গতি আনতে হলে কেন্দ্রের পাশাপাশি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়েও তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব আনতে হবে। যারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সক্রিয় রয়েছেন।

বিগত আন্দোলন সংগ্রামে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। দলে গতি আনতে মহানগরকে দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু এরপরও আশানুরূপ দক্ষতা দেখাতে পারেনি নেতারা। সর্বশেষ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ভোটের দিন বেশির ভাগ নেতাকেই কেন্দ্রে দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের হাইকমান্ড ক্ষুব্ধ। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও মহানগর নেতাদের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হয়। মহানগর কমিটি দ্রুত পুনর্গঠনের পক্ষে তারা মত দেন।

তবে এবারের ব্যর্থতার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হচ্ছে মহানগর নেতাদের। ভোটের দিন তারা কে কোথায় ছিলেন, কেন কেন্দ্রে যাননি তা বিস্তারিত তথ্য জানাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন।

আগামী কমিটিতে থাকার আশা প্রকাশ করে মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, নানা কারণে আমরা প্রত্যাশিত সফলতা দেখাতে পারিনি এটা সত্যি।

কিন্তু যারা পারবে তারা তো নতুন করে নাজিল হবে না। আমাদের মধ্য থেকেই নেতৃত্ব বাছাই করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যর্থতার তকমা দিয়ে কেউ যাতে নিজেদের আখের না গোছায় সেদিকে হাইকমান্ডকে সতর্ক থাকতে হবে।

মহানগর বিএনপিকে দুই ভাগ করে সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয় ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল। দলের যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে দক্ষিণের সভাপতি, কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক এবং উত্তরে এমএ কাইয়ুমকে সভাপতি, আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পার হওয়ায় এরই মধ্যে ওই কমিটির মেয়াদ শেষ।