ছাত্রলীগের কমিটিতে বিতর্কিতদের না রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০১৯

ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিত নেতাদের বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে ডেকে এ নির্দেশ দেন। গণভবন সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, এ সময় ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া এবং দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকায় থাকা ১২-১৫ বিতর্কিত নেতার নাম কালি দিয়ে চিহ্নিত করে তাদের বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন। তালিকায় যদি আরও কোনো বিতর্কিত নেতা থাকেন খোঁজখবর নিয়ে তাদেরও বাদ দিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে উপস্থিত সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা বিতর্কিতদের ব্যাপারে উত্থাপিত অভিযোগগুলো ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদেরও অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশ দেন। বিশেষ করে যাদের নামে খুনের মামলা, বিবাহ, মাদক ব্যবসার সংশ্লিষ্টতা, জামায়াত-বিএনপি পরিবার তথা মানবতাবিরোধী পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে তাদেরও চিহ্নিত করে অব্যাহতি দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা।

এদিকে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে বিতর্কিতদের স্থান দেয়া নিয়ে ক্ষোভ জানাতে গিয়ে নারী নেত্রীদের ওপর হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া নেতারা। এ ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের বক্তব্যের সমালোচনাও করেছেন তারা। পাশাপাশি মধুর ক্যান্টিনে ডাকসু নেতা ও নারী নেত্রীসহ কয়েকজনের ওপর ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা রয়েছে বলেও জানান আন্দোলনকারীরা।

বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি ও সমালোচনা করেন তারা। সোমবার মধুর ক্যান্টিনে নারী নেত্রীদের ওপর হামলা ও শারীরিক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

অন্যদিকে কমিটি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে ছাত্রলীগের নবগঠিত কমিটি ধানমণ্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে পারেনি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বুধবার দুপুর ১২টায় এ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের কথা ছিল। এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার কল করা হলেও তারা তা রিসিভ করেননি।

পরে সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান আল নাহিয়ান খান জয় যুগান্তরকে জানান, অনিবার্য কারণবশত জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি জানান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে মধুর ক্যান্টিনের সোমবারের ঘটনাকে মঙ্গলবার ‘ছোট সাধারণ ঘটনা’ হিসেবে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।

তার বক্তব্যের সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ডাকসুর সদস্য (ছাত্রলীগের নতুন কমিটির সংস্কৃতিবিষয়ক উপসম্পাদক) নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই প্রশ্ন রাখতে চাই, মধুর ক্যান্টিনের ঘটনাটি কোন পর্যায়ে গেলে তাদের মনে হতো এটি একটি বিশাল আকারের ঘটনা? আমাদের আর কতটুকু লাঞ্ছিত করলে তাদের মনে হতো ছাত্রলীগের নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে?