উপজেলা নির্বাচন: হাটহাজারীতে ফলাফল প্রত্যাখান করে মহাসড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ২:০৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৯

ঘড়ির কাটায় তখন ১টা বেজে ৫মিনিট। হাটাহাজরী পৌরসভার মীরের খিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র। ভোটারের উপস্থিতি হাতেগোনা। ওই কেন্দ্রের ৩ নম্বর মহিলা বুথে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার শুক্লা শাহা অলস সময় কাটাচ্ছেন।

তাছাড়া ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নূরে আলম জানান, তার এ কেন্দ্রে ৩৬৩৮ জন ভোটারের মধ্যে ওই সময় পর্যন্ত ৮টি বুথে ভোট পড়েছে মাত্র ১৫১টি। তার মধ্যে নারী ভোটারের সংখ্যা খুবই নগণ্য।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় বেশির ভাগ ভোটকেন্দ্রের প্রেক্ষাপট ছিল এমনটাই। নির্বাচন চলাকালীন কোনো কেন্দ্রে বড় ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

তবে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস এম রাশেদুল আলম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ভোটারের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভোটারদের আনাগোনা চোখে পড়লে তা বিগত নির্বাচনের তুলনায় একেবারে কম।

এ বছর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় নারী ও পুরুষ মিলে সর্বমোট ভোটার ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৪৬জন ভোটারদের মধ্যে শুধুমাত্র ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ৫১ হাজার ৮শ ৮জন। তারমধ্যে ১৫শ ২০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।

ফলাফল গণনায় বেসরকারিভাবে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম বাসেক (মাইক)। তিনি ১০৬টি কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ২৩৯৪১ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা এস এম খালেদ চৌধুরী (বৈদ্যুতিক বাল্ব) পেয়েছে ১৯৩৭৯ ভোট।

তাছাড়া বেসরকারিভাবে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুব মহিলা লীগের সদস্য মোক্তার বেগম মুক্তা (কলস)। তিনি পেয়েছেন ৩০৫১১ ভোট ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদা বেগম (হাঁস) পেয়েছেন ১৮৬৭৫ ভোট।

এছাড়া উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি উদয় কুমার সেন (তালা) পেয়েছেন ৪১৭৮ ভোট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা লায়ন কে. এম. জামাল উদ্দিন (উড়োজাহাজ) পেয়েছেন ১৭৭৩ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্ট নেতা কাজী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আজাদ (চেয়ার) পেয়েছেন ৬১৬ ভোট, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সৈয়দ মোস্তাফা আলম (নলকুপ) পেয়েছেন ১৫৩, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মো. কলিম (বই) পেয়েছে ৬৫ ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা এস এম জহির উদ্দিন চৌধুরী টিপু (চশমা) পেয়েছেন ১৮৩ ভোট।

এদিকে ফলাফর প্রত্যাখান করে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এম এ খালেদ চৌধুরী তার কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১নং সড়ক ও বাসস্টেশন এলাকায় গাড়ির টায়ার জালিয়ে অবরোধ করে।

এতে করে ওই মহাসড়কে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকারে পরিণত হতে হয়। এ সময় এস এম খালেদ চৌধুরী পুনর্নির্বাচন দাবি করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রদান করেন। অবরোধ চলাকালে দু’এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণের শব্দ শোনা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এতে করে যাত্রী সাধারণ ও স্থানীয়দের মধ্যে আতংক বিরাজ করতে দেখা গেছে।

রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি এসে অবরোধ সরিয়ে দিলে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়। কিন্তু অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নিলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ১০টায় তারা বাসস্টেশন এলাকার গোলচত্বরে অবস্থান নেন।

এ ব্যাপারে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাংগীর সাংবাদিকদের জানান, পরাজিত প্রার্থী এস এম খালেদ চৌধুরীর কর্মী ও সমর্থকরা বাসস্টেশন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ সৃষ্টির করেছে। পরে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ফাঁকা গুলির বর্ষণের ব্যাপারে কিছু জানেননা বলে জানান।