সুশীল সমাজের অভিমত

ঈদ উৎসবে বাঙালি সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে হবে

প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ৮, ২০১৯

এক সময় ধনী-গরিব সবাই এক হয়ে ঈদ উদযাপন করত সমগ্র বঙ্গে। এতে পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক সম্পর্ক মধুর হতো।

 

কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনে এ উৎসব উদযাপনের ভিন্নতা তৈরি হয়েছে। এখন মানুষ ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। সমাজের বিত্তবান মানুষগুলো পরিবার, গ্রাম ও সমাজ ছেড়ে ঈদ উদযাপন করতে হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট বেছে নিচ্ছেন।

কেউ চলে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। এটা হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বড়ই বেমানান। আর এসব চর্চা বেড়ে যাওয়ায় সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে।

সুশীল সমাজের অভিমত, সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন মেনে নিতে কোনো আপত্তি নেই। তবে ধার করা বিদেশি সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। বাঙালির হাজার বছরের সুন্দর পারিবারিক, সামাজিক ও মানবিক সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজনে বড় সামাজিক বিপ্লব করতে হবে।

 

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আআমস আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কারণে এখনকার প্রজন্ম সবকিছু নতুন করে ভাবছে, জীবন যাত্রাও সে রকম হচ্ছে। এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। তবে এর প্রভাবে মানবিক সম্পর্কগুলো যাতে নষ্ট হয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময় (১৯৬৪) বাংলাদেশে টেলিভিশন আসে। সে সময় সন্ধ্যায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা টেলিভিশন দেখানো হতো। সে সময় ঈদে আমরা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান দেখতাম। বাসায় ভালো খাবার খেতাম। স্বজনদের বাসায় যেতাম। তাদেরকে দাওয়াত করে খাওয়াতাম। সে সময়ের আর এ সময়ের ঈদ বিনোদনের পার্থক্য হচ্ছে আগে ঈদ বিনোদনে মানবিক সম্পর্কগুলোর পুরোপুরি উপস্থিতি ছিল। আর এখনকার ঈদ বিনোদনে মানবিক সম্পর্কের স্থান কম। আরও বলেন, এখন মানুষ ঈদ উদযাপন করছেন হোটেল, মোটেল ও বিভিন্ন রিসোর্টে। এসব ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্ক ও মানিবক সম্পর্কগুলো অনেকাংশে হ্রাস পাচ্ছে।

এ বিষয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নানা পরিবর্তন আসছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতা আসছে। কিন্তু আমাদের সমাজে এসব পরিবর্তনের সুফলের চেয়ে কুফল বেশি বয়ে এনেছে। সমাজটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। নিজেকে নিয়ে মানুষ বেশি ব্যস্ত। পরিবার, সমাজ থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে বিভিন্ন উৎসব উদযাপন করছে। এখান থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে হবে। বিদেশি সংস্কৃতি ধার না করে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তির আগ্রাসনে সমাজটা ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে। এজন্য প্রযুক্তির ব্যবহারসংক্রান্ত নীতিমালা করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর আমাদের উৎসবগুলোকেও আধুনিকতার মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে নাট্য ব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান বলেন, ঈদ বললে তো ঈদ হবে না। ঈদের স্বার্থকতার জন্য আন্তরিকতার পুরনো জায়গায় ফিরে যেতে হবে। মধ্যবিত্তরা এক সময় সমগ্র বঙ্গকে দেখিয়েছে, কিভাবে অল্পতে তুষ্ট থাকতে হয়। ওই সময়ও ঈদে মিলনমেলা হতো। পোলাও হতো নয়তো সাদা ভাত-মাংস খেতাম। খুব সুন্দর সম্পর্ক ছিল মানুষের মাঝে। সমাজটা এখনকার চেয়ে অনেকাংশে ভালো ছিল। তিনি বলেন, সমাজে বর্তমান এমন একটি অংশ তৈরি হয়েছে, যারা ঈদে বিপুল অর্থ খরচ করে ঈদ উদযাপন করে। কে কত টাকা দিয়ে কাপড় কিনল, কোন গাড়িতে চড়ে ঘোরাঘুরি করল, সেটাই মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। মানুষে মানুষে যোগাযোগ কমে গেছে। আগে ঈদের নামাজের একটা প্রাণ ছিল, এখন সেটা পাই না। সমাজের এ অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে বড় ধরনের বিপ্লব সাধনের কোনো বিকল্প নেই।