বসন্ত ও ভালোবাসার বন্দনা

প্রকাশিত: ২:০৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২০
ছবি সংগৃহীত

পুরো শহর যেন বসন্তের রং বাসন্তী আর ভালোবাসার রং লালে ছেয়ে গেছে। ফুলেল শোভা চারদিকে। পহেলা ফাল্পুন ও ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানী সেজেছিল উৎসবের রংয়ে। ফাগুনের প্রথম প্রহরে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে ছিল নানা আয়োজন। ভালোবাসার আবেশেই এবার রাঙিয়ে ছিল পহেলা ফাল্গুন।

 

বসন্ত বরণের ঐতিহ্য বাঙালির চিরন্তন। তাই তো ফাগুনের প্রথম প্রহরেই শুক্রবার নগরে বসন্ত উৎসব হয়। আয়োজনের উদ্যোগ নেয় জাতীয় বসন্ত উদযাপন পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সকাল থেকেই শুরু হয় নানা আয়োজন। বকুলতলা সাজে বাসন্তী রাঙা ভালোবাসার সাজে।

সকাল ৭টায় সুস্মিতা দেবনাথ ও তার দলের কণ্ঠে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মূর্ছনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। গান, কবিতা আর সম্মেলক নৃত্যে শুরু হয় নাগরিক বসন্ত উদযাপন। সুস্মিতা দেবনাথের পর সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করেন পূজা সেনগুপ্তা ও তার দল। সেসব পরিবেশনায় উৎসব পায় অন্য মাত্রা। ততক্ষণে বকুলতলার আনাচে-কানাচে বসন্তের বন্দনা-গানে মেতে ওঠে নগরবাসী।

উৎসব প্রাঙ্গণে কথা হয় উৎসব উদযাপন পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইটের সঙ্গে। তিনি বলেন, বসন্ত উৎসব উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য হল নগরবাসীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন যেন আরও দৃঢ় হয়। সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আমরা বাঙালি সংস্কৃতিতে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করব, তারা যেন শেকড়সন্ধানী হয়ে ওঠে। আর বসন্ত উদযাপন তো আমাদের অনন্য ঐতিহ্য।

আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ঋতু উৎসবের মধ্যে বসন্ত উৎসবের মর্ম একেবারেই আলাদা। বছরের শেষভাগের এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন এক বাংলা বর্ষ উদযাপনের অপেক্ষায় থাকি। নগরে বসন্ত উদযাপন প্রতি বছর নতুন মাত্রা পায় তরুণের কোলাহলে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং একইসঙ্গে ভালোবাসার উৎসব রং ছড়িয়েছে আরও বেশি। তবে এই উৎসবে এসে তাদের কণ্ঠে যখন মাটির কাছে ফেরার গান শুনি, তখন ভালো লাগে।

বসন্ত মানেই তো রং, রঙের খেলা। তাই তো সর্বোচ্চ রংটুকু দিয়ে নিজেদের সাজিয়ে উৎসবে যোগ দিয়েছেন সব বয়সের মানুষ। মেয়েরা সেজেছে বাসন্তী শাড়ির সঙ্গে হলুদ গাঁদা ফুল আর ছেলে ও শিশুরা সেজেছে বসন্তের আবির রাঙা পোশাকে।

নৃত্য, সঙ্গীত, আবৃত্তি, কথনের মধ্য দিয়ে নানা রঙে, নানা বর্ণে সবার সামনে প্রস্ফুটিত হয় বসন্তের নিবিড়তা। সকালের পর্ব শেষে বিকাল সাড়ে ৩টায় চারুকলায় বকুলতলায় উৎসবের দ্বিতীয় পর্বেও ছিল নানা পরিবেশনা। ধানমণ্ডির রবীন্দ্র সরোবর, উত্তরার রবীন্দ্র সরণি এবং বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস (বাফা) মঞ্চে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে উৎসব।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিকাল ৫টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে আয়োজন করে বসন্ত উৎসবের। শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীতের পর দুটি সমবেত সঙ্গীত ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ এবং ‘বসন্ত বাতাসে সইগো’ পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির প্রতিশ্র“তিশীল শিল্পীরা। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে একাডেমির বাউল ও ভাওয়াইয়া দল। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং দীপা খন্দকারের পরিচালনায় দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী নির্ঝর চৌধুরী। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিল্পী রূপা চক্রবর্তী ও শিমুল মোস্তফা। সবশেষে ছিল ব্যান্ড দল ‘কৃষ্ণকলি’র পরিবেশনা।