আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না : মেয়র নাছির

প্রকাশিত: ৩:১৯ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২০

আমরা দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝি না মন্তব্য করে মেয়র হিসেব দায়িত্ব পালনকালে তার কাজের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। সেই সঙ্গে নিজেকে ‘কাজপাগল’ বলে দাবি করেছেন তিনি।

মেয়র বলেন, ‘আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে আমি আগামী আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করব। এ সময়ের মধ্যে আমার অসমাপ্ত কাজগুলোকে সম্পন্ন করার চেষ্টা থাকবে। যখন আমি দায়িত্বে থাকব না তখন আমার কাজগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ আপনারা করবেন। আসলে আমাদের দেশে একটা বিষয় আছে- দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম আমরা বুঝি না। যখন থাকে না তখন মর্মটা বোঝা যায়।’

 

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ।

গত শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলমকে হারিয়ে মেয়র পদে জয়ী হয়েছিলেন। এবারের নির্বাচন হবে আগামী ২৯ মার্চ।

আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি মানুষকে ভালোবাসার চেষ্টা করি। মানুষের আর্থিক অবস্থা আমার কাছে বিবেচ্য নয়। আমরা যে কাজগুলো করেছি তার সুফল নগরবাসী পেতে শুরু করেছেন। কাজের মধ্যেই সময় অতিবাহিত করেছি। রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত অফিস করেছি। কোনো ফাইল জমে থাকেনি। দিনের কাজ দিনে করার চেষ্টা করেছি। এরপরও ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন আপনারা।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। আপনারা পরিসংখ্যান দেখতে পারেন। ১৯৯০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ২৫ বছরে ২,৫৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাব। অনেক প্রকল্প দেয়ার কারণে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি কাজ বাস্তবায়ন করেছি। আরও অনেক প্রকল্পের কাজ বাকি আছে। এলইডি লাইটের আওতায় আসছে পুরো শহর। আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, এখানে সড়কবাতি ছিল না। অন্ধকার থাকত। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর লাইটিংয়ের আওতায় এনেছি। ময়লা-আবর্জনা মাসের পর মাস দুর্গন্ধ ছড়াত। এখন সেই অবস্থায় আছে?’

 

নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘আমার মূল লক্ষ্য ছিল টেকসই উন্নয়ন। জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে প্রকল্প দেয়া হয়েছে। দেশপ্রেমী সেনাবাহিনী ড্রেন, খাল প্রশস্ত করছে, গভীর করছে। প্রকল্পগুলো যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে জনগণ এ দুর্ভোগ থেকে তত দ্রুত মুক্তি পাবে। আগে সড়ক ছিল, ফুটপাত ছিল না, নালা ছিল না। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে আগে ফুটপাত, ড্রেন, লাইটিং ছিল? এখন সবই করা হয়েছে। পোর্ট কানেকটিং রোড করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে চট্টগ্রামের গুরুত্ব ও প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে নগরটা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছি।’

রাজনীতি আমার এবাদত

মেয়র নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক কর্মী আছি, থাকব। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই, রাজনীতিকে আমি এবাদত হিসেবে নিয়েছি।’

‘যেখানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে আমি সংগ্রাম করেছি, আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজনীতি করছি, সেই জায়গায় ছোট্ট একটা মেয়র পদের জন্য এতকিছু করা হলো। আমার কাছে মেয়র পদটা তো বড় নয়, রাজনীতিটাই আমার কাছে বড়। কেউ যদি আমার কাছে এসে বলত, ভাই আমার মেয়রের পদ দরকার আছে, তুমি সরে যাও, আমি তো স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতাম।’

তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অভিমান, ক্ষোভ, রাগ নেই। আমি রাজনৈতিক কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠ থেকে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। চট্টগ্রাম কলেজকে শিবিরমুক্ত করতে গিয়ে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর মেয়র পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।’

নাছির বলেন, ‘গতবারও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেন, আমি কি চেয়েছিলাম, আমি কি বলেছিলাম যে আমাকে মনোনয়ন দেন? আমি যথারীতি একটা মনোনয়ন দলের কাছে চেয়েছিলাম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিয়েছিলেন। আমি তো কোনো লবিং করিনি। তাহলে এত মিথ্যাচার, অপপ্রচার, অপরাজনীতির তো প্রয়োজন ছিল না। এগুলো করতে গিয়ে কী হবে? দলই তো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আরেকজন আ জ ম নাছির উদ্দীন তৈরি হতে অনেক বছর লাগবে। আমরা তো দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী। আমাদের তো নতুন করে পরিচিত হওয়ার সুযোগ নেই।’

নিজেকে কাজপাগল দাবি করে মেয়র বলেন, ‘আমি সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চট্টগ্রামবাসী এত ভালোবাসেন এটা আমার বোধগম্য ছিল না। আমি জানি, মানুষের সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা আছে। আমি কাজপাগল মানুষ। এটা আমার পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার বাবা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। খেলাধুলা আমার রক্তের সঙ্গে মিশে আছে, তাই ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছেড়ে আমি যেতে পারি না।’