সুবর্ণচরে গণধর্ষণ ঘটনার মূলহোতা গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৯:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০১৯
সুবর্ণচরে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতা ইউপি সদস্য রুহুল আমিন। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা সিএনজিচালক স্বামী, ছেলের হাত বেঁধে ও কন্যাশিশুকে পিটিয়ে আহত করে তাদের সামনে গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনার মূলহোতাসহ আরও ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

রুহুল আমিনকে নোয়াখালী সদর উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চর ওয়াপদা গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী তাজুল ইসলামের বাড়ি ও বেচুকে সেনবাগ উপজেলার একটি ইটভাটা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে ১৩ জনের মধ্যে ৫ আসামিকে গ্রেফতার করলেও অপর আসামিরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সূত্র জানায়, ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার জেরে গত রোববার রাত ১১টায় উপজেলা চর জুবলি ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামে সিএনজিচালক মো. সিরাজ, ছেলে আবদুল কুদ্দুছ ও শিশু ইয়ানুরকে বেঁধে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাদের সামনেই গৃহবধূর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

ওই গৃহবধূকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের লোকজন গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ওই নারীসহ তার স্বামী-সন্তানদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে তারা সেখানেই চিকিৎসাধীন আছেন।

এ ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নির্যাতিতা ওই নারীসহ তার পরিবারকে আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে- নির্যাতিতা নারীর স্বামী বাদী হয়ে একই গ্রামের ইউপি সদস্য রুহুল আমিন, মোশাররফ হোসেন, বাদশা, সোহেল, হেঞ্জু, সোহেল, বেচু, জসিম, স্বপন, মো. হানিফ, আবুল, আনোয়ার, আমির হোসেনসহ ১৩ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ করলেও খোরশেদের ছেলে ইউপি সদস্য রুহুল আমিন, চান মিয়ার ছেলে হেঞ্জু, ইউছুফ মাঝির ছেলে আনোয়ারসহ ৪ জনকে অভিযোগ থেকে বাদ দিয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা এজাহারভুক্ত করেন ওসি। পরে ৫ দিন ধরে বিভিন্ন এলাকা থেকে এ ঘটনার মূলহোতাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর ৮ জন এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

অপরদিকে জাতীয় মহিলা সংস্থার পরিচালক পর্ষদের কেন্দ্রীয় সদস্য ইয়াদিয়া জামান, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়, জাতীয় মহিলা সংস্থার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) লুভনা মরিয়ম, জেলা মহিলা সংস্থার কর্মকর্তা মো. রাব্বি চৌধুরী, হাসপাতালে নির্যতাতিতা ও তার আহত পরিবারকে দেখতে যান এবং তাদের খোঁজখবর নেন।

পরে সাংবাদিকদের তারা বলেন, এ ঘটনা তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত সহযোগিতা করব। ভিকটিম নিহত হয়েছেন- এই ধরনের গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালের মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করা হচ্ছে। আমরা পুরো বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তুলে ধরব।

হাসপাতালে নির্যাতিতা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার সারা শরীরে পিটিয়ে রক্ত জমাট করে অচল করায় আমি বসতেও পারি না।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খলিল উল্লা, গাইনি বিভাগের চিকিৎসক মমতাজ বেগম, সিনিয়র নার্স সাজেদা বেগমসহ অপর নার্সরা জানান, ওই গৃহবধূর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে কামড়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল রিপোর্টে তাকে গণধর্ষণে আলামত প্রমাণিত হয়েছে। এ রিপোর্ট আদালতে পাঠানো হবে।

চর জব্বর থানার ওসি নিজাম উদ্দিনকে জানান, গণধর্ষণ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় পাঁচ দিনে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতার অভিযানে পুলিশ তৎপর রয়েছে।