সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেক কাটলেন এমপি

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২০

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় স্কুল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। একই সঙ্গে দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে ভূঞাপুর সরকারি পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানের কেক কাটা ও শোভাযাত্রা বের করা হয়।

 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ অবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অতি উৎসাহে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে খুবই আতঙ্কে রয়েছি আমরা। সরকারিভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসায় আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমেছে আমাদের। এরপরও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে নিয়েছেন।

কয়েকজন অভিভাবক জানিয়েছেন, স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের খুশি করতে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি ভাবেননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। তারা নেতাদের খুশির বিষয়টি ভেবেছেন। আমাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি ভাবলে সরকারি নির্দেশ অমান্য করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন না।

 

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতে ১০০ পাউন্ডের কেক কেটে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হয়। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেক কেটে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোটমনির। এতে উপস্থিত ছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরসভার মেয়র মাসুদুল হকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

ভূঞাপুর সরকারি পাইলট বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাল মাহমুদ মিয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দিবসটি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের কিছু সংখ্যক ছাত্রীকে নিয়ে কেক কাটা ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করেছি। তবে ওই ছাত্রীদের শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করানো হয়নি। সকাল ১০টার দিকে ছাত্রীদের বিদ্যালয় থেকে বিদায় দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে ভূঞাপুর সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহিউদ্দিনের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও ধরেননি তিনি।

ভূঞাপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খায়রুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনার আগেই কেকের অর্ডার দেয়া হয়েছিল বলেই অনুষ্ঠানে কিছু সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উপস্থিত করা হয়েছিল। তবে ওই শিক্ষার্থীদের জোর করে অনুষ্ঠানে আনা হয়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে আজকের অনুষ্ঠানে ছোট পরিসরে মাত্র ২৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে অনুষ্ঠান পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন পারভীন বলেন, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সরকারি নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়ে দিয়েছি আমরা। এরপরও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধান সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।