২৫ জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৮২৮ জন

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২০

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে আতঙ্ক। ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। গণপরিবহনে চলাচলের ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সারাদেশে করোনা সতর্কতায় দেড় সহস্রাধিক মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মাদারীপুরে ১২৯ জন, বরিশালে ২৬, সিরাজগঞ্জে ১৮, নওগাঁয় ৮৮, নেত্রকোনায় ৪, রাজবাড়ীতে ৩১, সাতক্ষীরায় ১৩, পটুয়াখালীতে ১৬, মানিকগঞ্জে ৩২৭, শরীয়তপুরে ২১০, ঝিনাইদহে ২৩৫, চাঁদপুরে ১৭৪, মৌলভীবাজারে ১১৩, কিশোরগঞ্জে ১৩৮, সুনামগঞ্জে ১০, বরগুনায় ১৩, নারায়ণগঞ্জে ২৩, সিলেটে ২, ফেনীতে ১৩৭, সাভারে ১৭, টাঙ্গাইলে ৬৬, হবিগঞ্জে ৯, রাঙ্গামাটিতে ৬, রংপুরে ৬ ও খুলনায় ১৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

 

মাদারীপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে মাদারীপুরে ১২৯ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন ও একজনকে আইসোলেশনে রাখা রয়েছে। গত কয়েকদিনে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর ১৩৮ জনকে রিলিজ দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. শফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করবে তাদের ব্যাপারে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরিশালে : বরিশালে ভারতীয় নাগরিকসহ ২৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত রোববার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২ জন। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ জনে।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক বাসুদেব কুমার দাস বলেন, এই ২৬ জন ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকবেন। এ সময় বাইরে চলাফেরা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদেরও চলাফেরা সীমিত করা হয়েছে। বিশেষ করে পরিবারের সদস্যদের নিজ ঘর ও আঙিনা পর্যন্ত এলাকায় চলাফেরা সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

নেত্রকোনা : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে নেত্রকোনায় বিদেশফেরত চারজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন ইতালিফেরত ও একজন চীনফেরত।

নেত্রকোনার সিভিল সার্জন মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ইতালি ও চীনফেরত ওই ব্যক্তিদের শরীরে কোনো করোনাভাইরাসের লক্ষণ নেই। এখন পর্যন্ত তারা সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। তারপরও সতর্কতা হিসেবে তাদেরকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় সপ্তাহ খানেক চলে গেছে।

নওগাঁ : নওগাঁর ১০ উপজেলায় বিদেশফেরত মোট ৮৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. আখতারুজ্জামান আলাল।

তিনি বলেন, বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদেরকে বাইরে ঘোরাফেরা না করে বাড়িতে অবস্থানের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ১৪ দিনের মধ্যে যদি তাদের শরীরে কোনো উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজবাড়ী : গত ২৪ ঘণ্টায় রাজবাড়ীতে নতুন করে ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে রাজবাড়ীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ৩১ জন প্রবাসী। এরা ইতালি, চীন, অস্ট্রেলিয়া, মালদ্বীপ, কাতার, সাউথ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন।

রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. মো. নুরুল ইসলাম জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই সুস্থ আছেন। সবাইকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। সদর হাসপাহালসহ প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা : সর্দি-কাশি থাকায় সাতক্ষীরায় ১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেল থেকে তাদের কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন সাফায়াত জানান, সাতক্ষীরায় ১৩ জনকে ইতোমধ্যে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়বে। এসব ব্যক্তিদের আমরা বিশেষ নজরদারির মধ্যে রেখেছি। তারা যেন বাইরে ঘোরাফেরা না করে সেজন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তিদদের ওপর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

সিরাজগঞ্জ : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সিরাজগঞ্জে ১৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বেলকুচি উপজেলায় পাঁচজন, রায়গঞ্জে তিনজন, কাজীপুরে একজন ও উল্লাপাড়া উপজেলার ৯ জন রয়েছেন। তাদের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ না থাকলেও সতর্কতার জন্য ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে একটি এবং প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মোট ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

পটুয়াখালী : পটুয়াখালীতে বিদেশফেরত আরও আটজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে দুজন, সৌদি আরব থেকে একজন, ইতালি থেকে একজন, নেদারল্যান্ডস থেকে চারজন সম্প্রতি দেশে ফেরেন।

পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১০ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত ১৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিদেশফেরতদের লিস্ট অনুসারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

মানিকগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় মানিকগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হয়েছে বিদেশ ফেরত আরও ৯৩ জন ব্যক্তি। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত জেলায় মোট ৩২৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণ শেষে গত ২৪ ঘণ্টায় ২০ জন প্রবাসীকে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত করা হয়েছে।

মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত কোনো করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী নেই। কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই সুস্থ আছেন। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা যারা অমান্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে সাটুরিয়া উপজেলায় ইরাক ও সৌদি আরব ফেরত দুই ব্যক্তিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানাও করেছেন।

শরীয়তপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে শরীয়তপুরে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুর পর্যন্ত মোট ২১০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিন পার হওয়ার পর ৩৩ জনকে কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে।

শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন ডা. এস এম আব্দুল্লাহ্ আল মুরাদ জানান, শরীয়তপুরের অনেকেই ইতালি প্রবাসী হওয়ায় জেলার মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদেরকে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমনে ২১০ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। হোম কোয়ারেন্টাইন না মানায় শরীয়তপুর সদর উজেলার কানার বাজার এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী লিটন বেপারী নামে একজনকে ৫ হাজার টাকা জরিমান করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ঝিনাইদহে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) নতুন করে বিদেশ ফেরতসহ ২৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে বিদেশ ফেরত ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভারত ফেরত ৪৬ জনসহ মোট ২৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলো।

ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন সেলিনা বেগম বলেন, বিদেশফেরত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে এ পর্যন্ত ২৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি।

চাঁদপুর : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চাঁদপুরে বিদেশফেরত ১৭৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াতউল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভীবাজার : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মৌলভীবাজারে ১১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও বড়লেখা উপজেলায় ইতালি, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যফেরতদের সঙ্গে তাদের কয়েকজন নিকট আত্মীয়ও রয়েছেন। তবে তাদের মধ্যে এখনও করোনার কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমদ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। এরপরও এমন কেউ থাকলে তথ্য পাওয়া মাত্র আমরা ব্যবস্থা নেব।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে মৌলভীবাজারে ১১৬টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেখানে করোনা রোগী পাওয়া গেলে চিকিৎসা দেয়া হবে।

কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জে করোনাভাইরাস সন্দেহে ১৩৮ জনকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেলার অষ্টগ্রামে ১২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাকিরা হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তবে ভৈরবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা ৬৯ জনকে মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। এখন পর্যন্ত জেলায় করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ২০ জন, ভৈরবে ৬৯, কুলিয়ারচরে ১২, অষ্টগ্রামে ১২, মিঠামইনে ১২, ইটনায় দুইজন, বাজিতপুরে দুইজন, কটিয়াদীতে আটজন ও তাড়াইলে একজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জে ইতালি, স্পেন ও ওমান থেকে আসা ১০ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত শনিবার (১৪ মার্চ) ও রোববার (১৫ মার্চ) বিদেশ ফেরত এ সকল প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন।

তিনি জানান, বিদেশ থেকে আসা ওই ১০ জনের বাড়ি সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়। তাদের মধ্যে কেউ নিজ উদ্যোগে আবার কারও তথ্য সোর্সের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। তবে তারা সুস্থ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি।

বরগুনা : বরগুনায় সদ্য বিদেশ ফেরত ১৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ‌বরগুনার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্থাপিত করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য গ্রহণ ও প্রদান কন্ট্রোলরুম থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ওই ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুয়ারা বলেন, বরগুনায় এ মুহূর্তে ১৩ জন হোম কোয়া‌রেন্টাই‌নে আছেন। এদের মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় দুইজন। বামনা উপজেলায় ছয়জন। পাথরঘাটা উপজেলায় দুইজন। বেতাগী উপজেলায় একজন। আমতলী উপজেলায় একজন এবং তালতলী উপজেলায় একজন আছেন।

হোম কোয়া‌রেন্টাই‌নে থাকা ১৩ জনের মধ্যে আজ (মঙ্গলবার ১৭ মার্চ) পাঁচজনকে রাখা হয়েছে।

সদ্য বিদেশ ফেরত এসব ব্যক্তিদের মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন তিনজন। লেবানন থেকে এসেছেন একজন। ওমান থেকে এসেছেন দুইজন। মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন দুইজন। সৌদি আরব থেকে এসেছেন তিনজন। ইতালি থেকে এসেছেন একজন এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন একজন।

এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমান শাহিন খান বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা এসব ব্যক্তিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন খোঁজ খবর নিচ্ছেন এবং তারা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়মাবলী সঠিকভাবে পালন করছেন কিনা সেই বিষয়গুলোও লক্ষ্য রাখছেন।

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক চীনা নাগরিকসহ বিদেশফেরত ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, চীনা নাগরিক ও বিদেশ ফেরসহ ২৩ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এছাড়াও ওই ২৩ জনকে বাইরে ঘোরাফেরা না করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সিলেট : করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে সিলেটে এক নারীসহ দুজনকে হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ওই নারী প্রথমে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। পরে সোমবার (১৬ মার্চ) দিবাগত রাতে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুশান্ত কুমার মহাপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফেনী : ফেনীতে ২৬ প্রবাসীসহ ১৩৭ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাহসিন নুর অমি জানান, ফেনীতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা সকলকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিরা।

ফেনীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থানকারী ২৬ জনের মধ্যে ১৩ জন ইতালী, ৩ জন কাতার, ১ জন কুয়েত, ১ জন গ্রীস, ১ জন কোরিয়া, ১ জন চীন, ২ জন বাহরাইন, ১ জন ডুবাই ও ভারত থেকে আসা ৩ জন প্রবাসী রয়েছেন।

জেলাজুড়ে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা থাকায় জেনারেল হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইশোলেসান ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও ফেনী ট্রমা সেন্টারে ৩০ শয্যা ও মঙ্গলকান্দি হাসপাতালে ২৫ শয্যা তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে আইসোলেশন শয্যা তৈরি করে রাখা হয়েছে। এছাড়াও করোনা আতঙ্কে বিলোনীয়া স্থল বন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাময়িক বন্ধ রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত হাট। খোলা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের হট লাইন।

সাভার : সাভারে প্রবাসফেরত ১৭ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মুল হুদা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, সাভারে এখনও কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। তবে গত ১৪ ও ১৫ মার্চ ইতালীর ৫, লেবাননের ১, আরব আমিরাতের ১, মালয়েশিয়া থেকে একজনসহ মোট ১৭ জন দেশে ফিরেছেন। তবে এদের কারও শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ পাওয়া যায়নি। তবে তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেনটাইনে রাখা হয়েছে। তারা যাতে ঘরের বাইরে বের হতে না পারেন সেই ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস ও প্রশাসন তাদের উপর নজরদারি রাখছে বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইলে হোম কোয়ারেন্টাইলে রয়েছেন মোট ৬৬ জন রোগী। এর মধ্যে মির্জাপুর উপজেলার রোগীই রয়েছে ৬০ জন। এদের বেশীরভাই ইতালী ফেরত বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান।

এছাড়াও ইতোমধ্যে দুইজন হোম কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন শেষ করে বাড়ি ফিরে গেছেন বলেও জানান তিনি।

হবিগঞ্জ : করোনা আতঙ্কে হবিগঞ্জে ৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ৯ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১ জন ভারত, ১ জন যুক্তরাজ্য, ১ জন যুক্তরাষ্ট্র, ১ জন ফ্রান্স এবং ৫ জন এসেছেন দুবাই, আবুধাবীসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে। তাদেরকে ১৪ দিন নিজেদের বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তারা নির্দেশনা মানছেন কি-না এ বিষয়ে প্রতিনিয়ত তাদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া এখনও পর্যন্ত জেলায় কেউ করোনা আক্রান্ত হননি। আইসোলেশনেও কাউকে রাখা হয়নি। তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাত্মক প্রস্তুতি রয়েছে।

রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটিতে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৬ জন প্রবাসী। মঙ্গলবার বিকেলে এ সত্যতা নিশ্চিত করেন রাঙ্গামাটির সিভিল সার্জন অফিসের ডা. মোস্তফা কামাল।

তিনি জানান, আগের এক স্পেন ফেরত প্রবাসীসহ বর্তমানে ৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।

এই মেডিকেল অফিসার আরও বলেন, আমরা তাদেরকে পর্যাবেক্ষণে রেখেছি। তারা আপাতত ভালো আছেন। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি।

রংপুর : রংপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারসহ ৬ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

এরমধ্যে কাউনিয়া উপজেলায় ৩ জন ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের কেল্লাবন্দ এলাকায় একজন। এছাড়াও পীরগাছা উপজেলার স্থানীয় আরও এক যুবককে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন হিরম্ব কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১ মার্চ রাতে সরকারি সফরে আমেরিকায় যান রংপুর বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম। গত সোমবার (১৬ মার্চ) ভোরে তিনি দেশে ফেরেন। এরপর রংপুর পৌঁছে সার্কিট হাউজের একটি কক্ষে অবস্থান নেন।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সানোয়ার বলেন, সোমবার দুপুরে অসুস্থ ওই যুবক তীব্র জ্বর অনুভব করলে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক কোনো কিছু না বুঝে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে পরিবারের লোকজনকে জানান।

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লোকজন খবর পেয়ে তাকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে রাতেই উপজেলা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করান। তার শরীরে প্রথম দিকে তীব্র জ্বর থাকলেও মঙ্গলবার তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক ছিল। ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে আইসোলেশন সেন্টার থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

খুলনা : করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খুলনায় ডুমুরিয়ার স্থানীয় ২ জনসহ বিদেশফেরত ১৭ জনকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এরা সম্প্রতি ভারত, সৌদি আরব, সিংগাপুর, ইতালি, কোরিয়া থেকে দেশে ফিরেছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের মধ্যে খুলনার দাকোপের ৭, তেরখাদার ৩, দিঘলিয়ার ২, খুলনা সদরের ৩ জন রয়েছেন। খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন।।

সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের তাদের বাড়িতেই থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তারা কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। তারপরও অন্তত ১৪ দিন তাদের বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।