প্রতিটি উপজেলায় উৎসবের আমেজ

প্রকাশিত: ১০:৩২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা সমালোচনার পর পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে ‘হার্ডলাইনে’ অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। নির্বাচনী এলাকা সফর এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণকালে অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও যে কোনো ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও শৈথিল্যের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তেও গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের সদিচ্ছা ফুটে উঠেছে। প্রথম দফায় ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ‘ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব হবে না’ উল্লেখ করে ইতোমধ্যে ৯ উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করা সেই ইঙ্গিতই বহন করে। ইসির এসব সিদ্ধান্ত ও তৎপরতার প্রভাব পড়েছে মাঠ পর্যায়েও। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সুনামগঞ্জ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও কোনোরকম অনিয়ম ছাড়া সম্পন্ন করার জন্য জেলা নির্বাচন অফিস, জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ভোটাররা যাতে সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে ভোটকেন্দ্রে ভোট প্রদান করতে পারেন এ জন্য কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করেছে পুলিশ প্রশাসন। গত কয়েক দিন ধরে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভায় ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্যই নির্বাচন কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। কোনো কারণে যদি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে তার সব দায় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর পড়ে। নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, আইনানুগ নির্বাচন পরিচালনা করতে চায়। এই নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের শৈথিল্য, কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। তিনি এ সময় আচরণবিধির ব্যাপারে স্ব স্ব কর্মকর্তাদের নানা দিকনির্দেশান দেন। তার এমন বক্তব্যের পরই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনামগঞ্জের ৯ উপজেলায় ৫৪২টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৭ হাজার ৫০ জন সদস্য মাঠে কাজ করবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরাদ উদ্দিন হাওলাদার জানান, ভোট গ্রহণে কোনো প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না। কেউ প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করলে সঙ্গে সঙ্গে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ। কোনো প্রকার অনিয়ম দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্নে আমরা ব্যর্থ হব না। নির্বাচনে কোনো ধরনের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না। অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই সুনামগঞ্জের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন যেন মডেল নির্বাচন হয়।
তাহিরপুর : আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুপুরে তাহিরপুর থানা প্রাঙ্গণে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪৬টি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ শতাধিক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের উদ্দেশে তাহিরপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. বাবুল আখতার বলেন, ভোটকেন্দ্রে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তিনি আরো বলেন, আপনারা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের টাকায় চলবেন, কোনো প্রার্থী বা তার কর্মী-সমর্থকদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিবেন না। সবাই সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন, যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম : উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রিটার্নিং অফিসাররা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের সময় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষের লোকজন বল প্রয়োগের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রগুলো নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল রাখতে পুলিশ, আনসার-ভিডিপি ও গ্রামপুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভোটগ্রহণের সময় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে র‌্যাব-বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে।