অবৈধ ভিওআইপির কারবার: সামনে আসছে অনেক প্রশ্ন

প্রকাশিত: ১০:৩৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১

রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১০)। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, চক্রটি দীর্ঘ আট বছর ধরে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা করে আসছিল। দীর্ঘদিন ব্যবসায় চক্রটি হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড ইনস্পেকশন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর এস এম গোলাম সারওয়ার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, এই চক্রটি সফটওয়্যার ভিত্তিক সুইচের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করতো। তারা টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের রাজস্ব ও চার্জ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল ও সফটওয়্যার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করে আসছিল।

এস এম গোলাম সারওয়ার বলেন, অবৈধ ভিওআইপির চক্রটি বিটিআরসির চোখ ফাঁকি দিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ টেলিযোগাযোগ সেবা দিয়ে যাচ্ছিল। অনেক সময় বিটিআরসির গ্যাপের কারণেও তারা সাময়িক ব্যবসা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা ধরা পড়েছে। বিটিআরসির টেকনোলজি আরও আপডেট ও লজিক পরিবর্তন করতে হবে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, বিটিআরসির চোখ ফাঁকি দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ টেলিযোগাযোগ সেবা দিয়ে যাচ্ছিল এই চক্রটি। বিটিআরসির ব্যর্থতা এবং এখানে আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কিনা সেই বিষয়টিও সামনে আসছে।

তিনি বলেন, অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে র‍্যাবের সঙ্গে বিটিআরসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। সেগুলো আপনারা দেখতে পারছেন। কিন্তু এর বাইরেও আমরা ধারাবাহিকভাবে অনেক কাজ করে আসছি, তবে সেগুলো অদৃশ্যমান।

বিটিআরসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রতি ১২ ঘণ্টা পর বিটিআরসির সেটআপ লজিক আছে, সেগুলো আমরা প্রয়োগ করি। এর মধ্যে যেসব সিমে সন্দেহজনক মনে হয় সেই সিমগুলো ব্লক করে দেওয়া হয়। অবৈধ ব্যবসায়ীদের সিম ব্লক করার পরে তারা নতুন নতুন সিমের স্টক আনে। এভাবে তারা তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অবৈধ এসব ব্যবসায়ীরা দেশের বাইরে থেকে টেকনিক্যাল জ্ঞান অর্জন করে। তাদের মাস্টারমাইন্ড থাকে এবং তারা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেয়। তারা সবসময় আপডেট থাকে এবং বিটিআরসি মডুয়েলকে কীভাবে ফাঁকি দেওয়া যায় তা এনালাইসিস করে তা ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করে তারা।

তিনি বলেন, অবৈধ ভিওআইপি নিয়ে বিটিআরসির যেসব কর্মকর্তারা কাজ করেন তারা অবৈধ কাজে জড়িয়ে যাচ্ছেন কিনা অথবা তাদের অবহেলার কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে কিনা সেগুলো মনিটরিং করতেও আমাদের একটি গ্রুপ কাজ করে। তবে এখানে বিটিআরসির কোনো ব্যর্থতা নেই।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-১০ ও বিটিআরসির সমন্বয়ে যৌথ আভিযানে রাজধানীর ফকিরাপুল গরমপানির গলি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের সঙ্গে জড়িত চার সদস্যকে আন্তর্জাতিক কলিং কার্ডসহ গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন মো. আমির হামজা (৩৩), মো. আলমগীর হোসেন (৪৫), মো. শামীম মিয়া (২৯) ও মো. সাগর মিয়া (২৭)। এসময় তাদের কাছ থেকে ডিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ২টি সিপিইউ, ২টি মনিটর, ১টি মাউস, ১টি কি-বোর্ড, ২টি প্রিন্টার, ২টি জেনারেটর, ১টি পেপার কাটার মেশিন, ১টি ডিজিটাল ওজন মেশিন ও ৪টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা বিটিআরসি থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়াই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চালিয়ে আসছিল।

প্রিন্টিং প্রেসে যে বিপুল পরিমাণ আন্তর্জাতিক কলিংকার্ড পাওয়া গেছে তা যদি ব্যবহার হতো তাহলে বাংলাদেশ সরকার আনুমানিক ১৯ কোটি ৪৭ লাখ ৪৭ হাজার ৭৫০ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতো।

তিনি আরও বলেন, এই অসাধু ভিওআইপি ব্যবসায়ীরা প্রচলিত সফটওয়্যার ভিত্তিক সুইচের মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক কল রাউট করতো ও স্থাপনা পরিচালনা করার মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রদেয় রাজস্ব ও চার্জ ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে যান্ত্রিক, ভার্চুয়াল এবং সফটওয়্যার ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করে অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করতো।

গ্রেফতারকৃতরা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত ডায়ালার অ্যাপ কলের মাধ্যমে বাংলাদেশে অবৈধভাবে রাউট করতো ও ওই অ্যাপে রিচার্জের জন্য বিভিন্ন অংকের কলিংকার্ড বিক্রি করতো। এছাড়া তারা অবৈধভাবে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জ সেবা প্রদান করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করতো।

 

প্রাথমিক অনুসন্ধানে র‍্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃতরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘ সাত থেকে আট বছর ধরে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি ও আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ও রিচার্জের ব্যবসা চালিয়ে আসছিল। প্রিন্টিং প্রেসে ভয়েস পাকিস্তান, পাকিস্তান ভয়েস, কাতার এক্সপ্রেস, এশিয়ান টেলিকম, এনএস এক্সপ্রেস, প্রবাসী কার্ড, স্বপন টেল, সুপার কার্ড ও কাতার টুসহ মোট ১০৭টি কলিংকার্ড ক্লায়েন্টের দেড় লক্ষাধিক কুপন পাওয়া গেছে।

চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ভিওআইপির ব্যবসা করে আসছিল। তারা ১৯ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল। তবে তার আগেই আমরা তাদেরকে গ্রেফতার করি। তারা হুন্ডির মাধ্যমে ও অসাধু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এসব ব্যবসা পরিচালনা করতো। তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়ার পর বলা যাবে তারা ইতোমধ্যে কত টাকার ব্যবসা করেছে।