কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের হুমকি বিজিএমইএর

প্রকাশিত: ৭:০০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট :গাজীপুর ও আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধের হুমকি দিয়েছে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আর শ্রমিকদের কোনো রকম উসকানিতে পা না দিয়ে কাজে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।

বিজিএমইএ সভাপতি শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘গত ৫ বছরে অনেক কষ্টে শিল্পের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে। একে কোনোভাবেই বিফলে যেতে দেবেন না। এ খাতটি ধ্বংস হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনারা। আপনারা কর্মহীন হবেন। আপনাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হতে পারে, এমন কোনো খাত এখনও গড়ে ওঠেনি। আপনারা কর্মস্থলে ফিরে যান, কাজ করুন। আর যদি আপনারা কাজ না করেন তা হলে কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’

অসন্তোষের উসকানিদাতাদের খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মালিক-শ্রমিককে মুখোমুখি দাঁড় করানোর পাঁয়তারা একটি স্বার্থান্বেষী মহলের। এরা উসকানি দিয়ে শ্রমিকদের অশান্ত করছে। এদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

মজুরির দাবিতে কর্মবিরতি অযৌক্তিক মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি শ্রমিকরা পাবেন জানুয়ারিতে। অথচ এ নিয়ে বিভিন্ন মহল শ্রমিকদের মধ্যে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গুজবে কান দিয়ে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। জানুয়ারিতে বেতন পাওয়ার পর যদি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করুন। কারখানা কর্তৃপক্ষ সমাধান দিতে না পারলে বিজিএমইএ অথবা সরকারের কাছেও যেতে পারেন।

তিনি বলেন, পোশাক খাতের সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৮ বছরে শ্রমিকদের মজুরি ৩৮১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধি হচ্ছে। ২০১৮ সালের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার পর ৫২টি শ্রমিক সংগঠন একত্রিত হয়ে স্বাগত জানিয়েছিল। এ মজুরি দেয়া অনেক কারখানা মালিকের পক্ষে কষ্ট হবে। তারপরেও প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাকে স্বাগত জানিয়ে ঘোষিত মজুরি মালিকরা মেনে নিয়েছেন। এ মজুরি বাস্তবায়ন করতে মালিকরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

নতুন মজুরি কাঠামোতে বৈষম্য রয়েছে বলে শ্রমিকদের মধ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সব গ্রেডে সমভাবে মজুরি বাড়েনি। প্রকৃতপক্ষে ২০১৮ সালের মজুরি গেজেট ২০১৩ সালের মজুরি গেজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হয়েছে। গেজেট অনুসারে কোনো শ্রমিকের মজুরি কমবে না। প্রত্যেকেরই পদ-পদবি ও গ্রেড অনুসারে মজুরি বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি পাওয়ার আগে কোনো আন্দোলন করার যৌক্তিকতা নেই। শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে উসকানি দিয়ে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যা মোটেও কাম্য নয়। তৈরি পোশাক খাত ধ্বংস হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিকরা।

জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, নির্বাচনের আগে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। মজুরি নিয়ে মতবিরোধ থাকলে গুজবে কান না দিয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ না করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যতে তা সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন হলে শ্রমিক ফেডারেশন ও বিজিএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা চাই না, আমাদের কারণে নির্বাচনে কোনো ধরনের প্রভাব পড়–ক। আমরা চাই পরিবেশ স্থিতিশীল থাকুক। শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে নির্বাচনে প্রভাব পড়ছে এ দায় আমরা নিতে চাই না। তাই সবাইকে ১৭ ডিসেম্বর কাজে যোগ দিতে হবে। শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কারও মনে সন্দেহ বা বেতন কাঠামোতে বেতন কমার আশঙ্কা থাকে, তাহলে নির্বাচনের আগে আরেকটু কষ্ট করুন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হতে দিন। নির্বাচনের পর আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি, গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার, গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন।