ব্যবসা করতে হলে মজুত করতে হবে: তেল ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ১০:৩০ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২২
এফবিসিসিআই ভবনে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভা

দেশে ভোজ্যতেলের কারসাজি নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছেন, ব্যবসা করতে হলে মজুত করতে হবে। তবে এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন দাবি করেছেন তারা।

বুধবার (১১ মে) ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র নিজস্ব ভবনে ভোজ্যতেল আমদানি, মজুত, সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ দাবি করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন মিল মালিকদের প্রতিনিধি, দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি এবং বিভিন্ন পর্যায়ের খুচরা ও আমদানিকারক পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা।

সভার শুরুতে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রীর কথা- ‘ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে ভুল করেছি।’ এমন মন্তব্য আমাদের ব্যথিত করেছে, ব্যবসায়ীদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টিকে গ্রুপের পরিচালক তসলিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা একে অন্যের ব্যাপারে দোষারোপ করছে, এতে ধ্বংস হয়ে যাবে মার্কেট। দোষ নয়, একে অন্যকে সহযোগিতা করতে হবে, নয়তো কেউ টিকতে পারবো না।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সরকার দুই কোটি লিটার তেল দিচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, এই তেল বাজার থেকে সংগ্রহ না করে আমদানি করতে। তাদের মতে, বিপুল পরিমাণ এ তেল দেশের বাজার থেকে সংগ্রহ করলে সংকট তৈরি হবে।

তসলিম উদ্দিন বাজারে স্বচ্ছতার বিষয়ে বলেন, বাজারে ট্রান্সপারেন্সি আনতে সরকার নিজে আমদানি করতে পারে, অথবা টিসিবির মাধ্যমে সরাসরি আমদানি করতে পারে। এতে সরকার বুঝতে পারবে দেশের মিল মালিকরা তেলে কোনো কারসাজি করছে কি না।

এস আলম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজারে পুরনো নিয়মে কস্টিং ফর্মুলা চলছে, এটা চেঞ্জ করতে হবে। এটা করতে না পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এখন বাজার বড় হচ্ছে, নিত্যনতুন সমস্যা এবং সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। এখনো সেই পুরনো নিয়মে পড়ে থাকলে কেউ সুফল পাবে না।

সভায় খুচরা ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ঈদের আগে তারা তেল পাননি। তেল না পাওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি। মিল মালিকরা তেল না ছাড়লে তারা ব্যবসা করবেন কীভাবে? এমন প্রশ্ন তাদের।

খুচরা বিক্রেতাদের এমন প্রশ্নে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, অভিযানে তেল তো বের হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের গুদাম থেকে। যদি তেল মিল মালিকরা না দেয় তবে এত তেল কোথা থেকে পেলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী গোলাম মওলা বলেন, ব্যবসা করতে হলে মজুত করতে হবে। তবে কতটা মজুত করলাম, আর কতটা বিক্রি করতে পারবো তার নির্দিষ্ট একটা গাইডলাইন প্রয়োজন। কিন্তু এমন নির্দেশনা আমাদের নাই।

তিনি বলেন, ১০ বছর আগে ১৮০ জন রিফাইনারি মালিক ছিল, এখন কমে ৭-৮ জনে নেমে এসেছে। মিল মালিকরা তাদের দেওয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করছে না। এ কারণে বেইজ্জত হতে হচ্ছে আমাদের। ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে, পুলিশ মামলা দিচ্ছে। অথচ মিল মালিকরা আমাদের চাহিদা এবং তাদের ওয়াদা মতো তেল সরবরাহ করেনি।

বাজার মনিটরিং কমিটি কোনো কাজ করেনি এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ বলেন, গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর কারণে আমাদের সবাইকে অসাধু ব্যবসায়ী শুনতে হচ্ছে। অথচ তেল পাওয়া যাচ্ছে কয়েকজনের কাছ থেকে। এদিকে পুরো দেশে ব্যবসায়ী ও দোকান আছে ৫৪ লাখ। সামান্য কয়েকজনের জন্য সবাইকে অসাধু বলবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।

দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল কাইউম তালুকদার বলেন, আমরা সবাইকে সতর্ক করেছিলাম কারসাজি না করতে। ভোক্তা অধিদপ্তরকে বলেছিলাম সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে। এর পরও যেসব দোকানি স্টক করেছেন, তারা অনৈতিক কাজ করেছেন। এদের আইনের আওতায় আনা দরকার।