হাঁটু গেড়ে, কান ধরে সড়কে হাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০১৯
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে শিক্ষার্থীদের অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি। ছবি- টাইমস বিডি

‘জীবনে হয়তো কোনো পাপ করেছি-যার প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষক-প্রশাসন দ্বন্দ্বের কারণে গত আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না। এমনিতেই আমরা সেশনজটের মধ্যে পড়েছি। তার ওপর ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে।’

ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবিতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হাঁটু গেড়ে ও কান ধরে অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে ক্ষোভে-দুঃখে-কষ্টে এমন কথা বলছিলেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র শামীম ইসলাম।

শুধু শামীমই নয়, দীর্ঘ আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষক আন্দোলনের ফলে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ার কারণে শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হওয়ায় সিএসই, বিজ্ঞান, ফিসারিজ অনুষদের শত শত শিক্ষার্থী অভিনব আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে বুধবার এমন কথা জানায়।

ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) অনুষদের লেভেল-৪, সেমিস্টার-২ এর ছাত্র সজীব চৌধুরী মাথায় জমটুপি আর হাতে ফাঁসির রশি নিয়ে জানায়, দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর দাবি জানালেও শিক্ষক ও প্রশাসন আমাদের কথা শুনছেন না। বাবা-মা অনেক আশা নিয়ে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের লেখাপড়ার জন্য পাঠিয়েছেন। তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমাদের আত্মাহুতি দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ই নেই। আমরা আত্মাহুতি দিলে, তার দায়ভার প্রশাসন ও শিক্ষকদেরকেই নিতে হবে।

ক্লাস ও পরীক্ষাবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রশাসন ও শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের জেরে তারা আমাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। আমাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা শুধু তাদের নিজেদের কথাই ভাবছেন, আমাদের কথা ভাবছেন না। নিজেদের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করার দাবি জানান তারা।

এদিকে হাবিপ্রবির সংকট নিরসনে গত মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টায় উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরত নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক, প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরাম, ছাত্রছাত্রী নিয়ে বৈঠকে বসেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাশেম। রাত ১২টা পর্যন্ত বৈঠক চললেও দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে চলা সংকটের নিরসন হয়নি। ফলে গতকাল বুধবারও ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হয়নি।

ক্লাস ও পরীক্ষা চালু না হওয়ায় বাধ্য হয়েই হাবিপ্রবির সিএসই, বিজ্ঞান, ফিসারিজ অনুষদের শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বুকে ফেস্টুন নিয়ে হাঁটু গেড়ে এবং কান ধরে অভিশাপ মোচনের প্রতীকী কর্মসূচি পালন করে। এ সময় কেউ কেউ মাথায় জমটুপি পরে হাতে ফাঁসির রশি নিয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটাই তাদের যে শিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় ভুল-এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে শিক্ষাবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত সহকারী অধ্যাপকদের নেতৃত্বদানকারী কৃষ্ণ চন্দ্র রায় বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা হচ্ছে না-এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, শিক্ষার্থীদেরকে দেখে কষ্ট লাগে আমাদের। কিন্তু আমরা আমাদের মর্যাদার জন্য লড়াই করছি। এই জায়গা থেকে সম্মানজনক নিষ্পত্তি পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকেই যাতে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সব দাবি থেকে সরে এসে সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সবশেষ দাবি হিসেবে রেজিস্ট্রারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলের দাবি জানানো হয়। কিন্তু প্রশাসন সেই সভাটি ভণ্ডুল করে দেয়। ফলে আমাদের সম্মানজনক নিষ্পত্তি হয়নি।

হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের নেতা প্রফেসর ড. হারুনর রশিদ জানান, মঙ্গলবার আমরা সমাধানের জন্য বসেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের কিছু শিক্ষকের জন্যই আলোচনাটি ভেস্তে যায়। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি সংকট সমাধান করে ক্লাস ও পরীক্ষা চালুর জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে হাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম জানান, একাধিকবার আলোচনার পরও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এরপরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাতে করে অতিদ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৪ নভেম্বর থেকে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ, সহকারী অধ্যাপকদের লাঞ্ছিত ও নারী শিক্ষিকাদের শ্লীলতাহানিকারীদের বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার ও ছাত্র উপদেষ্টার বহিষ্কার ও দুই সহকারী অধ্যাপকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপকরা। তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামও।

এতে গত আড়াই মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে থাকায় হাবিপ্রবির বিজ্ঞান, কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসসি) এবং ফিসারিজ অনুষদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার।