ভোগান্তির ‘শীর্ষ স্থান’ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর

প্রকাশিত: ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২২

রোজা রেখে সকাল সকাল গাইবান্ধা থেকে এসেছেন একজন শিক্ষক। মামলাজনিত কারণে গত চার বছর ধরে বেতন বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার ঢাকার মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে (ডিপিই) আসেন তিনি। কিন্তু সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টেবিলে টেবিলে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি। গত এক বছর আগে আবেদন করা তার ফাইলটি কোথায় আটকে আছে তা কেউ বলতে পারছে না।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সরেজমিন দেখা যায়, দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষকরা নানা তথ্য জানতে ও সমস্যা সমাধানে ডিপিইতে এসেছেন। কিন্তু অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে ব্যর্থ হয়ে। তাদের অভিযোগ, কর্মচারীদের হাতে টাকা দিলে ফাইল খুলে দেখান। আর টাকা না দিলে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর যেন ভোগান্তির এক ‘শীর্ষ স্থান’।

গাইবান্ধা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষক বলেন, গত এক বছর আগে আমার বকেয়া টাকা পেতে আবেদন করেছি। অনেকের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে তারা ডিপিইতে এসে খোঁজ নিতে বলেন। সে কারণে গতকাল রাতের বাসে এখানে আসি। সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর টেবিলে টেবিলে ঘুরেছি। কিন্তু কেউ কোনো তথ্য দিচ্ছে না। কোথায় কী অবস্থায় আমার ফাইল আছে তাও বলছে না।

এ বিষয়ে জানতে পলিসি ও অপারেশন শাখার পরিচালক ও উপ-পরিচালকের রুমে গেলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এখানেই শেষ নয় ভোগান্তির কথা। আরেক শিক্ষক গাজীপুর থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আসেন। গত ১৫ দিনে তিনবার আসলেও তার কোনো কাজ হয়নি। পেনশন বিতরণ শাখার একজন কর্মকর্তা তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ এই শিক্ষকের। তা না দেওয়ায় তার কাজের অগ্রগতি হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গত একমাস আগে আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ থেকে অবসরে গেছি। আমার একাডেমি সার্টিফিকেটে জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ও বয়সে অমিল ছিল। সেটি পরে সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে সে দোহাই দিয়ে আমার পেনশনের অর্থের ফাইল ছাড়া হচ্ছে না। টাকা ছাড়া ফাইল নড়াচড়া করছে না।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে অনেকবার গেলেও তার রুমে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

ঢাকার দোহার থেকে স্কুলের সমস্যা নিয়ে আসেন আরেক শিক্ষক। তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেও অধিদপ্তরে বিদ্যালয় শাখার কাউকে পাননি বলে ফিরে যাচ্ছিলেন।

এই শিক্ষক বলেন, কী আর বলবো ভাই, আমরা শিক্ষকরা নিচু তলার মানুষ, সে কারণে বড় স্যারেরা আমাদের কথা শুনতে চান না। তাদের ইচ্ছা হলে অফিসে আসেন, না হলে আসেন না। সাধারণ একটি কাজ নিয়ে গত তিন সপ্তাহ ধরে ঘুরেও করা সম্ভব হয়নি। সকাল থেকে অপেক্ষা করেও বিদ্যালয় শাখার কাউকে পেলাম না। সে কারণে ফিরে যাচ্ছি।

ডিপিই’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এ অধিদপ্তরে আটটি বিভাগ রয়েছে। সেখানে কাজ করেন আটজন পরিচালক। এর বাইরে একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও একজন মহাপরিচালক। কোনো দিন একসঙ্গে আট পরিচালককে পাওয়া যায় না। অধিকাংশ সময় তারা বাইরে থাকেন। তারা নিজেদের ইচ্ছামতো অফিস করায় অধীনস্থরাও তাই অনুসরণ করছে। কেউ দেখার নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিইর মহাপরিচালকের দপ্তরে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি কখন আসনে তাও বলতে পারেনি কেউ। ফোনে তাকে একাধিকবার কল দিলেও ফোন ধরেননি।

তবে প্রশাসন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বাহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমাদের জানা নেই। কেউ যদি ছুটি নেয় তাকে তো সিটে পাওয়া যাবে না। কারো বাইরে প্রয়োজন থাকায় তিনি সিটে উপস্থিত নেই। কেউ যদি হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন, তবে তার কাছে পাঠালে দেখবেন বলে জানান ডিপিইর এই কর্মকর্তা।