বাবা ও সৎ মাসহ চারজন গ্রেপ্তার

সন্তানকে হত্যা করে লাশে ফুটন্ত গরম পানি ঢেলেছিলেন বাবা-সতমা!

প্রকাশিত: ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় উদ্ধার হওয়া বাক্সবন্দী (স্টিলের ট্রাঙ্ক) অর্ধগলিত লাশটি ১২ বছরের শিশু জিহাদের। সে দিনাজপুর জেলার বিরলে বসবাসকারী জিয়াউর রহমানের ছেলে। ঘটনার ৬৩ দিন পর আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার পরিচয় ও হত্যা রহস্য উদঘাটন করার কথা জানিয়েছে রংপুর পিবিআই।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সতমায়ের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গত ১৪ জুলাই ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর গরম পানি ঢেলে শরীর ঝলসে দেওয়া হয়। পরে লাশ ওই বাক্সে বন্দী করে একটি পিকআপে ১৫ জুলাই রাতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ডোমার-ডিমলা সড়কে বালাপাড়া ইউনিয়নের রামডাঙ্গা ফরেস্ট এলাকায় ফেলে রাখা হয়। পরদিন পুলিশ বাক্স খুলে ওই লাশ উদ্ধার করে।
এঘটনায় নিহত শিশুর বাবা জিয়াউর রহমান (৩৫), তার দ্বিতীয় স্ত্রী (জিহাদের সতমা) আলেয়া মণি (১৯) ও শ্বশুর আইয়ুব আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পাশপাশি ওই লাশ বহনের পিকআপটি (ঢাকা মেট্রো ন-১১-৯৬০৭) আটক করে মালিক ও চালক ইসমাইল হোসেনকেও (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, শিশু জিহাদের সঙ্গে সতমা আলেয়া মণি এবং তার বাবা জিয়াউর রহমানের বনিবনা না হওয়ায় তারা একত্রে পরিকল্পিতভাবে গত ১৪ জুলাই রাতে ঘুমন্ত জিহাদকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন (১৫ জুলাই) সকাল বেলা হত্যার ঘটনা গোপন করতে তার বাসায় ব্যবহৃত একটি স্টিলের ট্র্যাংকে বাবা জিয়াউর রহমান, সতমা আলেয়া মনি ও নানা আইয়ুব আলী একটি বেডশীট ও কাঁথায় শিশু জিহাদের লাশ পেচিয়ে ট্রাংকের ভিতরে ঢুকায়। আইয়ুব আলী পার্শ্ববর্তী মীম ভ্যারাইটিজ  স্টোর হতে দুইটি চাইনিজ তালা কিনে এনে ট্রাংকটি তালাবদ্ধ করে। এরপর রাতে লাশভর্তি ট্রাংকটি অপসারণের জন্য বিরল হাসপাতালের গেটের সামনে হতে একটি নীল রঙের ছোট পিকআপ ভ্যান ১৩ হাজার টাকায় ভাড়া করে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ওই স্থানে ফেলে আসে।
গত সোমবার রাতে বিরল উপজেলা শহরের ভাড়া বাসার তৃতীয় তলায় অভিযান চালিয়ে নিহত শিশুর বাবা, সতমা এবং নানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের ওই ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার জব্দ করা হয়। যার মাধ্যমে জিহাদকে হত্যার পর পানি গরম করে মৃতদেহে ঢেলে দেওয়া হয়েছিল।
গত ১৬ জুলাই ওই লাশ উদ্ধার হলেও ২০ জুলাই মামলাটির তদন্তভার রংপুর পিবিআই গ্রহণ করে। এ ব্যাপারে রংপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন জানান, ক্লুলেস এই মামলায় আগে থেকে অনেক কিছু জানলেও নিশ্চিত হতে সময় লেগেছে। তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে সোমবার রাতে প্রথমে নিহত শিশুর বাবা ও সতমাকে গ্রেপ্তারের পর তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা পিবিআই’র হেফাজতে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বুধবার সকালে তাদের আদালতে হাজির করা হবে।