‘শেখের বেটির কাছে কিছু না চেয়েও আমি অনেক পেয়েছি’

প্রকাশিত: ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২০

করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে কর্মহীন ও অসহায় হয়ে পড়া মানুষের সহায়তায় নিজের ঘর মেরামতের জন্য তিল তিল করে জমানো ১০ হাজার টাকা দান করা শেরপুরের সেই আলোচিত ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের পাকা বাড়িতে উঠেছেন।

এ সময় নাজিম উদ্দিন আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে বলেন, শেখের বেটি শেখ হাসিনার কাছে কিছু না চেয়েও আমি অনেক পেয়েছি।

১৬ আগষ্ট রবিবার দুপুরে ঝিনাইগাতীর কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামে নাজিম উদ্দিনের হাতে পাকা ঘর ও দোকানের চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব। একই সময় নাজিম উদ্দিনের হাতে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম তার প্রতিশ্রুত একটি ইজিবাইকের চাবি হস্তান্তর করেন।

এসব হস্তান্তরকালে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জয়নাল আবেদীন, এনডিসি মিজানুর রহমান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর ছিদ্দিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

হস্তান্তরকালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, করোনা ভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে উপজেলা ত্রাণ তহবিলে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন নিজের ঘর মেরামতের জন্য তিল তিল করে জমানো ১০ হাজার টাকা দান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবার দৃষ্টি কাড়েন। সাথে সাথে প্রধানমন্ত্রী তার উদারতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং সেইসাথে তার পাকাঘর নির্মাণসহ জীবিকা নির্বাহে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তার বিশেষ তহবিলের অর্থায়নে উপজেলা প্রশাসন এক খন্ড জায়গা নির্ধারণসাপেক্ষে সেখানে পাকা বাড়ি নির্মাণ ও বাজারে একটি দোকানঘর নির্মাণ করে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আজ সেই পাকা বাড়ি ও দোকানঘরের চাবি হস্তান্তর করা হলো। নাজিম উদ্দিনের সেই দান ও উদারতা এক বিরল দৃষ্টান্ত বলে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক তার স্বীকৃতি ও মূল্যায়নে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, নাজিম উদ্দিনকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। সেইসাথে আজীবন নাজিম উদ্দিনের চিকিৎসা সহায়তাসহ তার এক অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্বও গ্রহণ করেছে প্রশাসন।

আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি হস্তান্তরের সময় নাজিম উদ্দিন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা করে চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ, আমার ৮২ বছর বয়স। শেখের বেটি শেখ হাসিনার কাছে কিছু না চেয়েও আমি অনেক পেয়েছি। তিনি আমাকে অনেক মূল্যায়ন করেছেন। আমার আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চির কৃতজ্ঞ। দোয়া করি, আল্লাহ তারে দীর্ঘদিন বাঁচায়ে রাখুক। সেইসাথে তিনি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সরাসরি সাক্ষাত প্রার্থনা করেন।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সেখানে ১৫ শতাংশ জমি দেওয়া হয়েছে। ওই জমিতে তাকে ২ কক্ষের একটি পাকা ঘরও করে দেওয়া হয়েছে। নাজিম উদ্দিনকে যাতে আর কখনো ভিক্ষা করতে না হয়, সেজন্য তাকে একটি দোকানও করে দিয়েছে সরকার।

উল্লেখ্য, ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন (৮২) দীর্ঘদিন ভিক্ষাবৃত্তি করে তার ঘর মেরামতের জন্য ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মহামারী আকার ধারণ করে। এলাকায় এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত হয় ত্রাণ তহবিল। তারই আওতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদের উদ্যোগে ত্রাণ তহবিল গঠিত হলে ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন তার ঘর মেরামতের জন্য জমানো ১০ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ত্রাণ তহবিলে দান করেন।

সংবাদটি মিডিয়ায় ভাইরাল হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাজিম উদ্দিনকে একটি পাকা ঘর ও জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি দোকান নির্মাণ করে দেয়ার জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ দেন। ওইসময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নাজিম উদ্দিনকে দেওয়া হয় সংবর্ধনা। আর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার আজীবন চিকিৎসাসহ অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহণ করে শেরপুর জেলা প্রশাসন।