শিক্ষার্থীকে মেরে চেয়ার কাঁধে গ্রাম ঘোরালেন শিক্ষক

প্রকাশিত: ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৯

খুলনার কয়রা উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীকে মেরে আহত করার পর তার কাঁধে চেয়ার তুলে দিয়ে গ্রাম ঘোরালেন এক শিক্ষক।

ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার উপজেলার ৩৫নং দক্ষিণ মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আহত দিপজয় মন্ডল (৭) বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

 

প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্কুল চলাকালীন দিপজয় মন্ডল একটি প্লাস্টিকের চেয়ার নিয়ে খেলতে থাকা অবস্থায় চেয়ারটি পড়ে গিয়ে ফেটে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে শিশু শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান। এ সময় মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকে শিশুটি।

ওই শিক্ষক চড়-থাপ্পড় দিয়ে ক্ষান্ত হননি, প্রধান শিক্ষককে ডেকে এনে শিশুটিকে বকাঝকা করে তার কাঁধে তুলে দেন ফাটা সেই প্লাস্টিকের চেয়ার। সেই সঙ্গে বলেন, চেয়ার কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে যাবি এবং আগামী দিন তোর বাপের কাছ থেকে নতুন চেয়ার কিনে নিয়ে স্কুলে আসবি, নতুবা স্কুলে আসার দরকার নাই।

শিক্ষকের ভয়ে শিশুটি কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারটি কাঁধে তুলে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়। এ সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীরা শিশুটির পেছনে পেছনে যান। পাশাপাশি উৎসুক জনতা ভিড় করেন। বিষয়টি দেখে লজ্জা-অপমানে কান্না ভেঙে পড়ে শিশুটি। এ সময় শিশুটির বাড়িতে কেউ না থাকায় তার পেছনে পেছনে আসা শিক্ষকরা স্কুলে ফিরে যান। শিশুটিকে পুনরায় ভয় দেখিয়ে বলে যান, আগামী দিন নতুন চেয়ার কিনে নিয়ে স্কুলে আসবি।

শিশুটির দাদা প্রদীপ কুমার মন্ডল বলেন, আমার নাতি চোখ ও কানের যন্ত্রণায় সারারাত ছটফট করেছে। তার কান্নাকাটিতে আমরা বাড়ির লোক কেউ ঘুমাতে পারিনি। সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করি তাকে। এখন অনেকটা সুস্থ হলেও এখনো তার আতঙ্ক কাটেনি। সে আর স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। আমি এর বিচার চাই, বলে কেঁদে ফেলেন দাদা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, শিশুটিকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার বাম চোখ ও বাম কানে মারাত্মক আঘাত লেগেছে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে, তবে কিছুদিন সময় লাগবে।

সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় বড় জোর আমাকে বদলি করতে পারে অন্যত্র। এজন্য আমি এক মাস আগে বদলির দরখাস্ত করে রেখেছি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আসলে আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা শিশুটির অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাশার বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আমি শুনিনি। তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।