রাজীবের মৃত্যুর দুই বছর, ক্ষতিপূরণের কোনো অর্থই পায়নি পরিবার

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০২০

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে হাত হারানোর পর তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হাসানের মৃত্যুর দুই বছরেও ক্ষতিপূরণের কোনো অর্থই পায়নি তার পরিবার।

এক মাসের মধ্যে রাজীবের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিতে স্বজন পরিবহনকে দেয়া আপিল বিভাগের নির্দেশের পর ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু একটা টাকা দেয়া হয়নি। রাজীবের মেঝো খালা খাদিজা বেগম লিপি এমনটিই জানিয়েছেন।

 

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) রাজীবের মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হলো। এই দুই বছরে রাজীবের ছোট দুই ভাই আদালতের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ তো পায়নি। এমনকি রাজীবের মৃত্যুর পর অনেকেই সাহায্যের আশ্বাস দিলেও এখন আর কেউ খবরও নিচ্ছেন না।

করোনা ভাইরাসের কারণে রাজীবের ছোট দুই ভাইসহ তার খালা এবং স্বজনরা এখন গ্রামে অবস্থান করছেন। রাজীবের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘরে বসেই দোয়া ও কুরআন পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

রাজীবের মেঝো খালা খাদিজা বেগম লিপি জানান, ১৬ এপ্রিল রাজীবের মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হলো। অর্থাৎ এটা তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আদালতের (আপিল বিভাগের) নির্দেশের পরও স্বজন পরিবহন এক টাকাও দেয়নি। করোনার কারণে রাজীবের ছোট দুই ভাইসহ আমরা গ্রামে আছি। ক্ষতিপূরণের কিছু অর্থ পেলেও রাজীবের ছোট দুই ভাই কিছু করে চলতে পারতো।

রাজীব হাসানের পরিবারকে এক মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা দিতে স্বজন পরিবহনকে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার রায় স্থগিত চেয়ে স্বজন পরিবহন আবেদন করলে ওই বছরের ১৭ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালতের বিচারপতি তা স্থগিত না করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। পরে ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন। এ সময় প্রাথমিক বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি স্বজন পরিবহনের আইনজীবীকে বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে আসেন। তারপর আমরা আপনাদের বাকি বক্তব্য শুনব।’

আদালতে স্বজন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল। রিটের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

গত বছরের ২৩ জুন রাজীবের দুই ভাইকে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে স্বজন পরিবহন।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে কলেজ ছাত্র রাজীবের। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ৪ এপ্রিল রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

হাইকোর্ট এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের রুল জারিসহ রাজীবের চিকিৎসার খরচ বহনে দুই বাস মালিক বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে নির্দেশ দেন।

এরপর আবেদনটি আপিল বিভাগের নির্দেশ মোতাবেক হাইকোর্টে রুল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে দুই পরিবহনকে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেন।