শেষ হলো মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্য-জেরা

প্রকাশিত: ১০:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১, ২০২১
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। ফাইল ছবি

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। চার্জশিটের মোট ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করে মামলার পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য আগামী ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে এ দিন ধার্য্য করেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম টাইমস বিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলামকে পঞ্চম দিনের মতো আসামিপক্ষের জেরার মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব সমাপ্ত হলো।

সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হওয়ার পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় আসামীরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে তাদের বক্তব্য প্রদান, আসামিদের পক্ষে সাফাই সাক্ষী প্রদান, আদালতে কাগজপত্র দাখিলসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করেছে। আসামিদের মধ্যে কামাল হোসেন, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, লিটন মিয়া, মোহাম্মদ রাজিব, সাফানুর করিম, নন্দদুলাল রক্ষিতকে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের পক্ষে তাদের নিয়োজিত আইনজীবীরা আদালতে লিখিত বক্তব্য দেবেন বলে আসামিরা আদালতকে জানান। বাকি সাতজন আসামিকে পরবর্তী ধার্য্য দিনে একই ধারায় পরীক্ষা করা হবে।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।

বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ সৈয়দুল ইসলাম, এসমিকা সুলতানা, শাহ আলম, আবুল আলা জাহাঙ্গীর প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম এ মামলার ৬৫ নম্বর সাক্ষী। এর আগে এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে আরও ৬৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আইও মো. খায়রুল ইসলাম বর্তমানে র্যাব সদর দপ্তরে গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত আছেন।

এর আগে, গত ১৬ নভেম্বর এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সহকারী পুলিশ সুপার মো. জামিলুল হককে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা জেরা সম্পন্ন করেন।

এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ জানান, চার্জশিটের অবশিষ্ট সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ আদালত প্রয়োজন মনে না করায় তাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি।

আসামিদের পক্ষে আদালতে অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ, দিলীপ দাশ, শামশুল আলম, মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি), মোহাম্মদ জাকারিয়া, এম.এ বারী, নুরুল হুদা, ওসমান সরওয়ার আলম শাহীন, মোশাররফ হোসেন শিমুল, ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ আইওকে জেরা করেন।

মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি জামিলুল হক ২০২০ সালের ৬ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত শুধুমাত্র ৮ দিন এ মামলার আইও হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হয়।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামিকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়। আসামিদের মধ্যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব জবানবন্দী দেননি। আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার পর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।