ভোটের মাঠে বিএনপির নতুন কৌশল

প্রকাশিত: ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৮

আগামী ৩০ নভেম্বর ভোটের মাঠে নিজেদের শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখতে ও ভোটের মাঠ দখলের লক্ষ্যে নীরব কৌশলের পথে এগোচ্ছে বিএনপি। এখন পর্যন্ত পরিবর্তনের প্রত্যাশা ধরে রেখেই প্রচারণার শেষ পাঁচ দিন অর্থাৎ আজ ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোদমে মাঠ দখলে রাখতে চায় দলটি। দলটির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী এমন বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি, আগামী ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করেও নির্বাচনী শেষ বার্তা দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে দলটি। বিএনপি দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা জানান, খেলার জন্য প্রস্তুত আছে বিএনপি। এই খেলায় কোনো চাপের মুখেই তারা মাঠ ছাড়বেন না। নেতাদের ধারণা, আজ সোমবার সেনাবাহিনী মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাবে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি। সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ধরে রাখতে সেনাবাহিনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যবস্থা করবে। নির্বাচন কমিশনও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবে। তা ছাড়া সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ সরাসরি হামলা করতে বা মামলা দিতে সাহস পাবে না। এই সুযোগেই শেষ সময়টাতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নামবে তারা। এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, সশস্ত্র বাহিনী অবশ্যই সব দলের জন্য নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে। সেই সঙ্গে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, আমরা আশা করি সশস্ত্র বাহিনী দেশের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে না। সশস্ত্র বাহিনী দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে থাকবে।
পাশাপাশি, সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে ২৭ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দীর জনসভায় নেতাকর্মীদের নিয়ে নিশ্চিন্তে শোডাউন করতে পারবেন তারা। বিএনপি জোট ও নেতাদের দাবি, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোও সরকার পরিবর্তন চায়। এমন ধারণা থেকে তারা নিয়মিত ক‚টনৈতিক ব্রিফিং করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে তাদের হস্তক্ষেপ চাইছেন। বিদেশিরা শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে আওয়াজ তুলবে বলেই বিশ্বাস তাদের। এ ক্ষেত্রে ড. কামালের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সহানুভ‚তি অর্জনে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। জানা গেছে, ড. কামালের তৎপরতার কারণেই সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ওপর গভীর পর্যবেক্ষণের কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিএনপি নেতারা। এ লক্ষ্যে ভোটের দিনে সারা দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ৪টি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি কমিটি ও উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন দলের নির্ভরশীল নেতারা। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও পুলিশি বাধা এড়াতে বিএনপি নেতাকর্মীরা নৌকার ব্যাজ ব্যবহার করে এবং জয়বাংলা স্লোগানের মাধ্যমে নিজেদের আড়াল রাখবেন। এসব করা হবে যাতে ভোটকেন্দ্রের ভেতরের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেন্দ্রে বার্তা পাঠানো সহজ হয়। এ ছাড়াও ভোটের আগের রাতে ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে প্রতিটি কেন্দ্রভিত্তিক টিম গঠনের জন্য স্থানীয় নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোটের পরিকল্পনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভোটের আগের রাত থেকে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। ভয় পাওয়া যাবে না। ন্যায়ের স্বার্থে ধানের শীষের জন্য ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে অবস্থান নিতে হবে। সূত্র জানায়, প্রচারণায় হামলার কারণে মাঠে না থাকলেও নীরব কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সরব দলটি। নতুন-পুরনো ভোটারদের আস্থা অর্জন করে নিজেদের কাতারে টানতে তৈরি হয়েছে অভিনব ভিডিও, গান ও স্লোগান।
তথ্যচিত্রের মধ্য দিয়ে সরল ভাষায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে তারা এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন যে, আওয়ামী সরকারের ভুল-ভ্রান্তির চিত্রই শুধু নয়, নিরপেক্ষভাবে ভোটারদের কাছে নিজেদের তুলে ধরতে ভয়-আতঙ্ক এড়িয়ে ভোটকেন্দ্রে যান, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিন, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করুন। পাশাপশি, কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভ‚তিতে বিশ্বজোয়ার সৃষ্টি হওয়া সেই পরিবেশটিও তুলে ধরা হচ্ছে এসব প্রচারণামূলক তথ্যচিত্রে।
এ ছাড়া, ভোটের মাঠে প্রশাসনকে কোন পরিকল্পনায় কাজে লাগাতে চায় সরকার সে বিষয়ে গোপন খবর রাখছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি-জামায়াত আদর্শে যেসব নেতাকর্মীরা এতদিন প্রশাসনে ঘাপটি মেরে ছিল তারাই শেষ সময়ে গোপন তথ্যগুলো দলের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এ ছাড়াও ভোটের মাঠে সাহস নিয়ে অবস্থান গ্রহণ এবং ভোট চুরি ঠেকাতে স্থানীয় নেতাদের উদ্যোগে আলাদা ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, ভোটের দিন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে কাজ করতে কোটা আন্দোলনকারী অনেক শিক্ষার্থী এর মধ্যেই যে যার এলাকায় চলে গেছেন। এজেন্টদের নিরাপত্তা দিতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তারাও মাঠে থাকবেন।