বালাউট দারুল কুরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৯

গতকাল ১৮ আগস্ট উদ্বোধন হলো ‘বালাউট দারুণ কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা’র (বালাউট ছাহেব বাড়ী, জকিগঞ্জ, সিলেট) স্থায়ী ক্যাম্পাস। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি মানব সন্তান বা একটি চারাগাছের সাথে তুলনা করা যায়। যে ধরনের যত্ন নিয়ে, পরিচর্যা করে সন্তান বা চারাগাছকে আগলে রেখে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয় ঠিক তেমনি আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার অপরিসীম নজির স্থাপন করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে স্থায়িত্বের সুদৃঢ় ভীতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে। এটা সবার পক্ষে করা সম্ভব হয় না। মহান আল্লাহর খাস রহমত প্রাপ্ত না হলে এ কাজ আঞ্জাম দেয়া বেশ মুশকিল। বালাউট দারুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন প্রিন্সিপাল আল্লামা শুয়াইবুর রহমান বালাউটি ছাহেব। তাঁর তত্বাবধানে সুষ্ঠুভাবে চলছে মাদরাসাটি। তাঁরই প্রচেষ্টায় আজ উদ্বোধন হলো মাদরাসার নিজস্ব ভবন ও স্থায়ী ক্যাম্পাস। ইতিপূর্বে অস্থায়ী ভবনে চলছিল মাদরাসার ক্লাস ও সমগ্র কার্যক্রম। আল্লামা বালাউটি ছাহেবের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও আধ্যাত্মিক জীবন তথা জীবনের সকল পর্যায়েই এক মহান আদর্শের প্রতিকৃতি। তাঁর আদর্শের অনুসারী হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মুরিদীন-মুহিব্বিন তথা জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হৃদয়ে স্বতন্ত্র আসন করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর বহুমুখী খেদমতের বিস্তারিত আলোচনা করা সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। এখানে অতি সংক্ষেপে তাঁর একটু পরিচয় তুলে ধরার প্রয়াস মাত্র।

অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি।পিতা-মরহুম মো. রছমান আলী, মাতা-মোছাম্মাত জয়নব বিবি। তিনি ১৯৪৩ ইংরেজি সালের ১৫ই মে সিলেট জেলাধীন জকিগঞ্জ উপজেলাস্থ ৩নং কাজলসার ইউনিয়নের বালাউট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৩ভাই ৩বোনের মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন পিতামাতার কাছে। মক্তব শেষ করে ১৯৪৭ইং সালে সড়কের বাজার আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। ১৯৪৯ ইং সালে বাড়ির নিকটস্থ হাড়িকান্দি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর ইছামতি দারুল উলূম কামিল(এম.এ) মাদরাসা থেকে ১৯৫৬ ইং সালে দাখিল এবং ১৯৫৮ ইং সালে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। উক্ত মাদরাসা থেকে ১৯৬০ ইং সালে ফাজিল পাশ করে ভর্তি হন সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় এবং ১৯৬২ ইং সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে কামিল উত্তীর্ণ হন।

তিনি ১৯৬০ইং সালে বাদেদেওরাইল ফুলতলী কামিল (এম.এ.) মাদরাসায় খন্ডকালীন সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ১৯৬২ইং সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানেই প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করে কর্মজীবনের সূচনা ঘটিয়ে ১৯৭৫ইং সাল পর্যন্ত দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। ১৯৭৬ইং সাল থেকে ১৯৮২ইং সাল পর্যন্ত আটগ্রাম আমজদিয়া মাদরাসায় প্রধান শিক্ষকের পদে অধ্যাপনা করেন।১৯৮২ইং সাল থেকে জালালপুর জালালিয়া কামিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে ২০০৮ইং সালে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ কর্মবীর ১৯৯০ইং সালে সিলেট জেলা শিক্ষা সপ্তাহে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং ১৯৯৩ইং সালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমীতে(নায়েম) প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি অন্ত “শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ” সম্মানে ভূষিত হন।পারিবারিক জীবনে ১১পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক তিনি।পুত্র সন্তানদের ৩জন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করছেন।অন্যান্যদের মধ্যে ১জন ডাক্তার,১জন কোরআনে হাফিজ এবং অন্যরা শিক্ষার্জনে রত রয়েছেন।

অধ্যক্ষ মাওলানা মো. শুয়াইবুর রহমান বালাউটি উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গ, শামসুলউলামা আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী রহ.-এর কাছ থেকে ১৪৮৭ হিজরী সনে ইলমে কেরাত এবং ১৯৭১ইং সালে তরিকত বা আধ্যাত্মিক সাধনার সনদ লাভ করেন।তিনি একজন ইসলামি দার্শনিক হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত খানকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে করেছে জননন্দিত। তাঁর শিক্ষার্থীবৃন্দ দেশ-বিদেশে উচ্চ পর্যায়ের চাকুরীতে নিয়োজিত থেকে সুনাম কুড়াচ্ছেন। তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থ রয়েছে।তার বাগ্মিতা এবং সমাজ ও দেশ হিতৈষী কর্মকাণ্ড তাকে সবার নিকট করেছে প্রশংসিত। তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনের প্রক্ষাপটে ইসলামি জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দান করে অভিভাবকের সম্মান লাভ করেছেন। মহৎপ্রাণ এ বুজুর্গের দীর্ঘ নেক হায়াত ও ছেহেত তন্দুরুস্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই।