নিলফামারীতে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে লাশ হলো প্রেমিকা

প্রকাশিত: ১১:০৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি: প্রেমিকের বাড়িতে বিয়ের দাবিতে গিয়ে লাশ হয়েছে অনার্স পড়ুয়া ছাত্রী সুরভী আক্তার। বিচার সালিশের সময় মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নে।

স্থানীয় সূত্র জানায়,জেলার ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটকপুর ইউনিয়নের মৌজাপাঙ্গা লক্ষ্মীপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুস সাত্তারের মেয়ে সুরভী আক্তার হামিদা। মেয়েটি নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুরভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল পার্শ্ববর্তী ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের শোভানগঞ্জ তেলীপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী আফজাল হোসেনের ছেলে আরফান হোসেনের সঙ্গে। আরফান পঞ্চগড় সরকারি কলেজের ইসলামি ইতিহাসে অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

অভিযোগে জানা গেছে, প্রেমিক আরফানের কথামতো সোমবার বিকাল ৪টার দিকে সুরভী বিয়ের দাবি নিয়ে প্রেমিকের বাড়িতে এসে উঠে। কিন্তু ছেলের পরিবার সুরভীকে মেনে না নিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিলে সুরভী আশ্রয় নেয় প্রেমিকের চাচা পাশের বাড়ি আশরাফ হোসেনের বাসায়। তারাও সুরভীকে বাড়ির ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি।

ওইদিন শীত উপেক্ষা করে সারা রাত মেয়েটি প্রেমিকের চাচার বাড়ির বাইরে কাটিয়ে দেয়। পরের দিন মঙ্গলবার প্রেমিক আরফানের বাবা বালাপাড়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার মাধ্যমে সালিশ বৈঠকের ব্যবস্থা করে।

এদিকে অনাহারে সুরভীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে অবস্থান নেন প্রেমিকের চাচার বাড়িতে উঠনে।

মঙ্গলবার দিন গড়িয়ে রাত ৯টায় বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে বসে সালিশ বৈঠক। সেখানে সুরভীর গ্রামের প্রভাবশালী নেতা নুরুজ্জামান বাবলুসহ প্রেমিক আরফানের গ্রামের ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম ও বেশ কিছু গ্রাম্য মাতব্বর উপস্থিত ছিল।

সালিশ বৈঠকে সুরভীসহ তার বাবা বা পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকলেও সমাধান টানা হয় দেড় লাখ টাকায়। সালিশের মুচলেকায় প্রেমিকা সুরভীর স্বাক্ষরের জন্য সালিশ বৈঠকে উপস্থিতরা রাতেই সকলেই যায় আশরাফের বাড়িতে। কিন্তু সুরভী প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ে ছাড়া কোনো সালিশ মানে না বলে মুচলেকায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকার জানায়।

এলাকাবাসী জানায়, এ সময় প্রেমিকের বাড়ির লোকজন সুরভীকে মারধর করলে সুরভী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর সুরভীকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।

বুধবার সকালে ডিমলা উপজেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রাশেদুজ্জামান জানান, রাত আড়াইটার দিকে একটি মাইক্রেবাসে এক নারী রোগী আনা হয়। কিন্তু আমরা রোগীকে মৃত অবস্থায় পাই। সঙ্গে দুজন মহিলা ও ৩-৪ জন পুরুষ ছিল। মৃতার নাম জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে পারেনি। একপর্যায়ে তারা সকলে লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি ডিমলা থানায় অবগত করি।

তিনি আরও বলেন, সকাল হতে হঠাৎ করে মৃতার মুখ ও নাক দিয়ে ফ্যানা বের হয়।

ডিমলা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, হাসপাতাল থেকে জেনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসা হয়। এরা হলেন ওই মেয়েটির প্রেমিকের বাবা আফজাল হোসেন, মামা ফসিয়ার রহমান ও চাচা শাহাজাহান আলী। খবর দিয়ে নিয়ে আসা হয় মেয়েটির বাবা আবদুল সাত্তারকে।

তিনি বলেন, সুরতহাল শেষে হাসপাতাল হতে সুরভীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয় জেলার মর্গে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হয় বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভুঁইয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, শুনেছি ফেসবুকে ও পরে মোবাইলে তাদের নাকি প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটি বিয়ের দাবি নিয়ে ছেলের বাড়ি এলে ছেলেপক্ষ আমার কাছে সালিশের জন্য আসে। ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাত ৯টায় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার সালিশ বসলেও আমি কিছুক্ষণ ছিলাম। জরুরি কাজে আমাকে অন্যত্র চলে যেতে হয়। যারা ছিল তারা কীভাবে বিচার সালিশ করেছে আমি জানি না। বুধবার সকালে জানতে পারি মেয়েটি নাকি মারা গেছে।

এদিকে সুরভীর কৃষক বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, আমি আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার চাই।