ত্রাণের লোভে রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়ছে শিশুর জন্ম

প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০১৯

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ঘরে প্রতিদিন ৬০-৮০ শিশুর জন্ম হচ্ছে। গত ২০ মাসে নতুন করে আসা রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী সন্তানসম্ভবা।

 

ফলে আগামী এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে বিভিন্ন সংস্থার জরিপ সূত্রে জানা গেছে। এ নিয়ে সরকারি সংস্থার মতবিরোধ থাকলেও স্থানীয় সুশীল সমাজ ও সচেতন মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নিবন্ধনভুক্ত চার লাখ রোহিঙ্গা পরিবারে আরও এক লাখ শিশু জন্ম নিয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে যে সাত লাখ রোহিঙ্গা এসেছে, এদের মধ্যেও ২ লাখ ৪০ হাজার শিশু-কিশোর রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রত্যাবাসনকাল বেশি দীর্ঘ হলে বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশু ও এখানে বড় হওয়া শিশু-কিশোরদের নাগরিকত্ব নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।পরিকল্পিত উখিয়া চাই’র আহ্বায়ক সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ সিকদার বলেছেন, এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গা শিশুদের এবং মায়েদের জন্য সামান্য পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে তাদের সন্তান প্রসবে উৎসাহিত করছে। তারা মনে করছে, সন্তান হলেই তার জন্য আলাদা ভরণ-পোষণ পাওয়া যাবে। তাই ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশু জন্মের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হলেও তারা সেটি মানছে না। আরও একটি বিষয় আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা হল বাংলাদেশে জন্ম নেয়া এবং এখানে শিশু-কিশোর বয়স থেকে বেড়ে ওঠা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠতে পারে। সব মিলিয়ে অধিক হারে রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম নিয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রোহিঙ্গা শিশুদের নাগরিকত্ব বিষয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্মসূত্রে বাংলাদেশি বলা যাবে না। অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত দিক-নির্দেশনা দেয়া উচিত। যেসব শিশু বাংলাদেশে জন্ম নিচ্ছে তাদের তালিকা, জন্ম তারিখ, ব্লাড গ্রুপসহ প্রয়োজনীয় তথ্য থাকা উচিত।

 

উখিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিকারুমান (বর্তমানে ছুটিতে) বলেন, একটি ক্রাইটেরিয়া ছিল জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেটে একটি সিল থাকবে, সেখানে লেখা থাকবে তারা মিয়ানমারের নাগরিক। ওই জন্ম নিবন্ধনের কাজটাও চলছিল শুধু নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের জন্য। কিন্তু এই নিবন্ধিতদের বাইরেও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ছিল, যাদের বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। এবার এই রোহিঙ্গা আসার পর থেকে কক্সবাজারের পুরো জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটাই বন্ধ রয়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের জন্ম নিবন্ধনের বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো ইনস্ট্রাকশন নেই।

রোহিঙ্গাদের সেবায় নিয়োজিত ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) দেয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ১৩ শতাংশ কিশোরী এবং ২১ শতাংশ গর্ভবতী ও প্রসূতি। শিশুদের মধ্যে ৬-১৮ বছর বয়সী শিশুর হার ২৩ শতাংশ, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর হার ২১ শতাংশ এবং ১ বছরের কম বয়সের শিশুর হার ৭ শতাংশ।

উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে আসে, তখন প্রথম তিন মাসে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৪৮০ জন গর্ভবতী নারীর। তার মধ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হয় সাড়ে পাঁচ হাজার শিশু আর বাকিগুলো হোম ডেলিভারি হয়। সেই হিসাবে লক্ষাধিক শিশুর জন্ম নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ নিয়ে নতুন করে সার্ভে করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপ-পরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য সোমবার গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে পরবর্তী ২০ মাসে নবজাতকের সংখ্যা আমাদের হিসাব মতে লক্ষাধিক হয় না, কিন্তু বিভিন্ন জরিপ সংস্থা কীভাবে এক লাখ বলছে। সে ব্যাপারে আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তিনি বলেন, আমাদের ২ শতাধিক কর্মী সপ্তাহে ২ দিন করে উখিয়া-টেকনাফে কাজ করছে। বেশ কিছু সময় আমরা জন্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করার পর তারা সচেতন হয়েছে। আমরা এ পর্যন্ত ৭২ হাজার নারীকে ইনজেকশন দিয়েছি, ৭৬ হাজার নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধ দিয়েছি। এছাড়া তিন বছর মেয়াদি ২ হাজার ৪৯১ জন আর ১০ বছর মেয়াদি ইনজেকশন দিয়েছি ২ হাজার ১০০ জনকে।