করোনায় থমকে আছে আবরার হত্যার বিচার

প্রকাশিত: ২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৪, ২০২১

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় গত ৫ এপ্রিল দেশব্যাপী লকডাউন জারি করেছে সরকার। এই লকডাউনে নিম্ন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম চলছে সীমিত পরিসরে। এই সময়ে শুধু সদ্য গ্রেফতারকৃত (প্রোডাকশন) আসামিদের রিমান্ড ও জামিন শুনানি চলছে সশীরে। এছাড়া ভার্চুয়ালি চলছে রিমান্ড শুনানি, জামিন শুনানি ও নতুন মামলার ফাইলিং (নিবন্ধন)। এ পরিস্থিতিতে কোনো মামলার সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে না। সাক্ষ্য না নেয়ায় অনেক মামলার বিচারিক কার্যক্রম থেমে রয়েছে। থেমে রয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রমও।

আবরার হত্যা মামলায় আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। সাফাই সাক্ষীর পর যুক্তি উপস্থাপন। এরপর আইনানুযায়ী মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি প্রশান্ত কুমার হাওলাদার বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। মামলাটিতে এখন আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। সাফাই সাক্ষ্য শেষ হলে যুক্তি উপস্থাপন। এরপর মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে আদালতের সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রয়েছে। আদালতের বিচারিক কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার বিচারিক কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে মামলার বিচারিক কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ হবে আশা করছি।’

আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন চুক্তির সমালোচনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে আবরার ফাহাদকে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।

ওই ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।

অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত আরও ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।

গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মেহেদী হাসান রাসেল, অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।

মামলার তিনজন আসামি এখনো পলাতক আছেন। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জন এজাহারবহির্ভূত আসামি।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। মামলায় ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ৪৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।