আমার সাথে যারা লেগেছে তারা তছনছ হয়ে গেছে : কক্সবাজারের মেয়র

প্রকাশিত: ৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০২০

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মেয়র নিজেই।

তিনি বলেছেন, ‘হোটেল দখল, বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ তুলে নেত্রীর কান ভারী করার চেষ্টা চলছে। এসব অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’

তার দ্বারা কোনো মানুষের ক্ষতি হয়েছে- এমন কাউকে দেখাতে পারলেও তিনি আর রাজনীতি না করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমার সাথে লাগা পুলিশের বড় অফিসারও তছনছ হয়ে গেছে।’

বুধবার (১৮ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলা পরিষদের হলরুমে দীপ্তটিভির পঞ্চম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন মেয়র মুজিবুর রহমান।

মেয়র বলেন, ‘কক্সবাজার সদর-রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, আমি কক্সবাজারের ২২টি হোটেল দখল করেছি। একজন সাংবাদিক লিখেছেন আমি নাকি বিদেশে ২১ কোটি টাকা পাচার করেছি। যার মাধ্যমে টাকা পাচার করেছি তিনি নাকি মারা গেছেন। এসব অভিযোগ শুধু নেত্রী নন, যে কেউ শুনলে মন খারাপ করবেন। আমার নেত্রী মন খারাপ করলে, আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হবে।’

মেয়র মুজিব বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি, ২২টি নয় একটি হোটেলও দখল করেছি বলে প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। শুধু তা নয় আমার দ্বারা একজন মানুষের ক্ষতি হয়েছে দেখাতে পারলে আমি রাজনীতি আর করব না।’

সম্প্রতি দুদক কক্সবাজারের বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে মেয়রের দুই শিশুসন্তানের নামে কোটি টাকার এফডিআর জব্দ করে। এ টাকার উৎস নিয়ে ওঠা প্রশ্নকে ইঙ্গিত করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমি করোনাকালে আমার বাবার লাখ লাখ টাকা মানুষের জন্য খরচ করেছি। কক্সবাজারের পর্যটন খাত থেকে আজ যে শত শত কোটি টাকা আয় হচ্ছে সেটা আমার বাবার অবদান। আধুনিক মৎস্যসংরক্ষণ পদ্ধতি আমার বাবারই করা। আর আধুনিক লবণচাষ পদ্ধতি আমারই সৃষ্টি। বিসিককে সাথে নিয়ে আমিই সেটা করেছি।’

তবে এ সময় তিনি তার কী পরিমাণ পৈতৃক সম্পদ বা আয় রয়েছে সেটি উল্লেখ করেননি। তিনি উপস্থিত সাংবাদিক আকরাম হোসাইনকে দেখিয়ে বলেন, ‘তিনি (আকরাম) কয়েকদিন আগেও বড়মাপের ডাকাতদের আত্মসমর্পণ করিয়েছেন। সাংবাদিকতা করে ভালো কিছু করা যায়।’

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি আমি চুরি করে থাকি আপনারা আমাকে চোর বলে লিখুন, যদি ডাকাতি করি, তাহলে ডাকাত বলে লিখুন। কিন্তুু মিথ্যা সংবাদ লিখে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে ইঙ্গিত করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আপনার এখনো সময় আছে- এখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, আইজিপি হতে বেশি সময় লাগবে না। আমার সাথে যাদের সম্পর্ক ভালো ছিল, তারা এসপি-ডিআইজি-আইজিপি হয়ে অবসরে গেছেন। আর যারা আমার সাথে লেগেছে (বৈরী সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন) তারা তছনছ হয়ে গেছে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) মাসুদুর রহমান মোল্লা, ডিবির ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী, জলদস্যু ও ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণে মধ্যস্থতাকারী সাংবাদিক এম এম আকরাম হোসাইন, কক্সবাজার পৌরসভার নারী কাউন্সিলর জাহেদা আকতার, আরটিভির কক্সবাজার প্রতিনিধি সাইফুর রহিম শাহীন, কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক সায়ীদ আলমগীর, দৈনিক মেহেদীর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ইকবাল বাহার চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও নানান পেশাজীবী মানুষ।

উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর কক্সবাজারের মেয়র মুজিবুর রহমানের দুই শিশুসন্তানের নামে এক কোটি নয় লাখ টাকার এফডিআর জব্দ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর আগেও কয়েক দফায় মেয়রের পরিবার ও ছেলে মেহেদী হাসানের বিপুল পরিমাণ টাকা জব্দ কর দুদক।

একইভাবে গত ১৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে মেয়র মুজিবুর রহমানের আটটি দলিল জব্দ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বায়নাকৃত জমির দলিল, বাকি পাঁচটি আমমোক্তারনামা। জব্দ করা দলিলের জমির পরিমাণ ৮৭ দশমিক ৮৩ শতক।

আর ১৫ সেপ্টেম্বর মেয়র ও তার পরিবারের ছয় কোটি টাকার সম্পত্তির খোঁজ পায় দুদক। এছাড়াও গত ২৩ সেপ্টেম্বর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালিয়ে মেয়রের শ্যালক মিজানুর রহমানের চার কোটি টাকা জব্দ করে দুদক।

অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগারের জমি অধিগ্রহণে মেয়র মুজিবুর রহমান প্রভাব খাটিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। এসব নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করার পর মুজিবুর রহমান ও তার স্বজনদের ব্যাংক থেকে টাকা ও জমির দলিল জব্দ করা হয়। এর ফলে গত কয়েক মাস ধরে নিয়মিতই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে আসছেন মুজিবুর রহমান।

তাছাড়া সম্প্রতি হোটেল দখল ও কোটি টাকা চাঁদাবাজি নিয়ে মেয়র মুজিবুর রহমানের পৃথক দুটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও ফাঁস হওয়া অডিওগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন মেয়র মুজিব। এর মাঝেই বুধবার তিনি উপরোল্লিখিত বক্তব্য রেখে আবারও হৈ চৈ ফেলে দিলেন।