বিজয়ী হয়ে আবারও সরকার গঠন করব: শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১০:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি জেলায় নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি-টাইমস বিডি

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষের কাছে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে গেছে। মানুষ এখন সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাই আমি বিশ্বাস করি, অবশ্যই তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং বিজয়ী হয়ে আমরা আবারও সরকার গঠন করব।

বিকাল ৩টা থেকে পর্যায়ক্রমে কুমিল্লা টাউন হল ময়দান, টাঙ্গাইল পৌর উদ্যান, যশোর টাউন হল ময়দান, পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ মাঠ এবং পঞ্চগড়ের জালাসি হাইস্কুল মাঠে এসব জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভাগুলোতে অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিজয়ী হয়ে, ক্ষমতায় থেকেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে চাই। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী আমরা পালন করব। আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশ, এটা ধরে রাখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। এ ছাড়া ২০৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ উদ্যাপন করব এবং ২১০০ সালে আমরা ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করব। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

সরকারের ধারাবাহিকতায় গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় এবং তার সুফলটা মানুষ পায়।

নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। সারা দেশে ৫৬০টা মডেল মসজিদ আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একটা করে স্টেডিয়াম আমরা করে দেব। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট প্রতিষ্ঠা করে দিচ্ছি। এভাবে আমরা একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে উন্নয়ন করে যাব। তরুণদের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এটা আমরা বিশ্বাস করি। এই তরুণদের শক্তিকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। তাছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন আমরা নিশ্চিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা শান্তি দেয়। নৌকা মার্কা উন্নয়ন দেয়। নৌকা এগিয়ে নিয়ে যায়। নৌকা মার্কা সমৃদ্ধি দেবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করুন। আমরা যেন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে পারি। সেটাই আপনাদের কাছে চাই। এখানে যারা আছেন, আপনারা এলাকার অন্য মানুষদের কাছে পৌঁছে দেবেন।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আপনারা নিরাপদে থাকবেন। কারণ ইতিমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪৪১ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৭০টা অফিস-বাড়িঘর তারা ভাংচুর করেছে, ৫৪টা স্থানে বোমা হামলা করেছে। পেট্রলবোমা হামলাও চালানো হয়েছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের এই চরিত্রটা বদলাতে হবে। কারণ এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মানুষ কখনও পছন্দ করে না। কখনো পছন্দ করবে না। সারা বাংলাদেশের সবাইকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কাজ যদি কেউ করতে আসে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে তাদের তুলে দিতে হবে।

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চরিত্রটাই হল সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র চোরাকারবারি নানা অপকর্মে এরা লিপ্ত থাকে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫-তে এরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। মসজিদে আগুন দিয়েছে, কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। এরা করেনি এমন কোনো কাজ নেই।

তিনি বলেন, তারা ধ্বংস করতে জানে। তারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছে, বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে। এরা শুধু মানুষের ক্ষতি করতে পারে। কাজেই এ ধরনের জঙ্গি-সন্ত্রাসী, যারা দেশের সম্পদ লুটপাট করে, দেশের সম্পদ পাচার করে, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করে এরা বাংলাদেশের মানুষকে কিছু দিতে পারবে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই সন্ত্রাসীরা এখন ধানের শীষে ভোট চাচ্ছে। তাদের কোনোভাবেই ভোট দেয়া যাবে না। কারণ ধানের শীষ মানে জঙ্গিবাদ, ধানের শীষ মানে সন্ত্রাস, ধানের শীষ মানে দুর্নীতি, লুটপাট, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ। ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার।

তিনি আরও বলেন, একটা কথা মনে রাখবেন। এই বিএনপি-জামায়াত জোট সব সময় সন্ত্রাস করে। তাদের এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের শিকার যাতে কেউ না হয়, সেজন্য প্রত্যেককে নিরাপদে চলতে হবে। একটা সুন্দর পরিবেশ বজায় থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। প্রত্যেকটা ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। যাতে করে এরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে। কারণ এদের চরিত্র পরিবর্তন হয় নাই। এরা সন্ত্রাস করে, মানি লন্ডারিং করে।

তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এরা অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও তদন্তের বেরিয়ে এসেছে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে যে মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, এরা যে সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত। খালেদা জিয়ার ছেলের পাচার করা অর্থও আমরা উদ্ধার করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি চাইব সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যাতে আমরা জয়ী হতে পারি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারি। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারি।

তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে আপনারা জানেন, নির্বাচনের আগে আমি সংলাপ করেছিলাম প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। আমরা চাই প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। কারণ নির্বাচনে অংশ নেয়া তাদের রাজনৈতিক অধিকার। সেখানে তাদের বাধা দেয়া বা কোনো রকম প্রতিবদ্ধকতা যেন সৃষ্টি করা না হয়। প্রত্যেকে নির্বাচনে অংশ নেবে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কাকে ভোট দেবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় জঙ্গি দমনে সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস, মাদকমুক্ত করে মানুষের জীবনে শান্তি-নিরাপত্তা দিতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে সেটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তি চায়। এই নির্বাচনটাও শান্তিপূর্ণ হবে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সবার অংশগ্রহণে এই নির্বাচন অর্থবহ হবে।