নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমছে না

প্রকাশিত: ৯:৪৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯

দুই সপ্তাহ ধরে নিত্যপণ্যের দামে ভোক্তার অস্থিরতা কমছে না। গত সপ্তাহের মতো শুক্রবার বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্য ক্রেতাদের উচ্চমূল্য দিয়ে কিনতে হয়েছে।

তবে পেঁয়াজ, গরুর মাংস, চালসহ বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ ও নয়াবাজার ঘুরে শুক্রবার এ তথ্য পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয় ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। যা গত সপ্তাহে একই দাম ছিল।

বিক্রেতারা বলছেন, এক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি সপ্তাহে ৫-১০ টাকা করে বাড়ছে। কিন্তু এই মুরগির দাম এক মাস আগে কেজিতে ১২০ টাকা ছিল। এদিকে মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা টিসিবির (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায়ও লক্ষ করা গেছে। তালিকা অনুযায়ী সেখানে মাসের ব্যবধানে ব্রয়লারের দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

একইভাবে শুক্রবার বাজারে কক মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০-২২৫ টাকা কেজি। যা গত দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। আর পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হয় কেজি ২৬০-২৮০ টাকায়। তবে স্থিতিশীল পাওয়া গেছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। এদিন বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয় ৪৮০-৫০০ টাকা ও খাসির মাংস ৭৮০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের চিকেন মার্কেটের মুরগি বিক্রেতা সিকান্দার যুগান্তরকে জানান, বাজারে মুরগির সরবরাহ কম। পাইকারি বাজারে মুরগি আনতে বেশি দাম দিতে হচ্ছে। আর এই বেশি দামের কারণ হিসেবে পাইকাররা বলছেন, খামারি পর্যায় থেকে মুরগি পালনে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মুরগির খাবারের দাম বেশি। ওষুধের দামও বাড়তি। সব মিলে খামারিরা বেশি দাম ধরে পাইকারদের কাছে মুরগি ছাড়ছেন। যার প্রভাব পড়ছে একেবারে ভোক্তা পর্যায় পর্যন্ত।

শুক্রবার সবজির বাজারে উত্তাপ দেখা যায়। এদিন বাজারে নতুন আসা কচুর লতি বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা ৭০ টাকা। ঝিঙা ৮০-৯০ টাকা কেজি। করলা বিক্রি হয় প্রতি কেজি ১২০-১৩০ টাকা। তবে বেগুন, শালগম, মুলা, পেঁপে ও বীচিবিহীন শিম বিক্রি হয় ২০-২২ টাকা কেজি। কোনো কোনো স্থানে ২৫ টাকাও বিক্রি করতে দেখা গেছে। যা গত দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ টাকা কেজি। আর বীচিসহ শিম বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হয় ২০-৩০ টাকা। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয় আকার ভেদে ৫০-৭০ টাকা। আর ধুন্দুল বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে পাকা টমেটো বিক্রি হয়েছে ২০-২৫ টাকা কেজি।

রাজধানীর নয়বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. বসির আহমেদ বলেন, শীত মৌসুম শেষ। এজন্য শীতের সবজির সরবরাহ কম। তাই শীতের সবজির দাম বাড়ছে। আবার গ্রীষ্মের সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি।

এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভোজ্যতেল বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের এক বোতল সয়াবিন শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৪৯০-৫০০ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৪৮০ টাকায়। এদিন প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৮৮-৯০ টাকায়। যা গত দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৮২-৮৩ টাকায়।

ছুটির দিনে শুক্রবার মাছ বাজারে ভোক্তার অস্থিরতা ছিল। এদিন পাঙ্গাশ বিক্রি হয় ১৪০ টাকা কেজি। যা গত দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকা। রুই বিক্রি হয় ২৬০ টাকা কেজি। যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ২২০ টাকায়। তবে বড় আকারের রুই গত সপ্তাহের মতো ৪৫০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পাবদা মাছ বিক্রি হয় মানভেদে ৫০০-৭০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া বিক্রি হয় ১৫০-১৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া গত দুই সপ্তাহ আগে ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মৃগেল মাছ শুক্রবার বিক্রি হয় ২৬০-২৮০ টাকা কেজি। টেংরা মাছ বিক্রি হয় ৫০০-৬৫০ টাকা কেজি। শিং মাছ বিক্রি হয় ৪০০-৬০০ টাকা কেজি, বোয়াল মাছ বিক্রি হয় ৫০০-৮০০ টাকা কেজি, চিতল মাছ বিক্রি হয় ৫০০-৮০০ টাকা কেজি। আর ছোট আকারের এক হালি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০-১০০০ টাকায়, মাঝারি আকারের ১৬০০-২১০০ টাকায়।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মিনু আক্তার বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম চড়া। মুরগি, সবজি ও মাছ গত সপ্তাহের মতো বাড়তি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কিন্তু বাজারে এ সব পণ্যের কোনো ধরনের কমতি নাই। খেয়ে বাঁচতে হবে এ জন্য নিরুপায় হয়ে এ সব খাদ্যপণ্য কিনছি। দেখার যেন কেউ নেই।