দুদকের অনুসন্ধান: চমকে দেয়ার মতো সম্পদ আবজালের

প্রকাশিত: ২:০৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০১৯

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন খাতে সিন্ডিকেট করে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. আবদুর রশিদসহ ৬ কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুদক। দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম পরিচালক ডা. রশিদকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ১০টায় হাজির হতে বলেছেন।

কেরানির চাকরি করে চমকে যাওয়ার মতো সম্পদের মালিক হয়ে এখন আলোচনায় আবজাল। তার মতো কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তার দুই ভাই ও তিন শ্যালকও। এর আগে তাদের তলব করা হলেও তারা হাজির না হওয়ায় পুনরায় চিঠি দেয়া হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, আবজালই তার ভাই ও শ্যালকদের চাকরি দিয়েছেন। আফজালের স্ত্রী রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার সাবেক স্টেনোগ্রাফার ছিলেন। রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে ব্যবসা করছেন।

দুদকের প্রথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, আবজালের নামে উত্তরার ১৫নং সেক্টরে ৩ কাঠার দুটি প্লট, মিরপুরে ৯ কাঠা জমির আড়াই কাঠার ওপর টিনশেড বাড়ি, খিলক্ষেতে ৩ কাঠা ও ৪ কাঠার দুটি প্লট রয়েছে।

এছাড়া ফরিদপুর কোতোয়ালি পৌরসভার রঘুনাথপুরে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি, পৌরসভার হাবেলী মৌজায় ১৫ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি, খুলনার খালিশপুরে সাড়ে ৩ কাঠার প্লট ও সাড়ে ৫ কাঠা জমি রয়েছে। ফরিদপুরের টেপাখোলায় ১১৪ শতাংশ, রাজবাড়ির বসন্তপুরে ২৩০ শতাংশ জমির তথ্য মিলেছে।

স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে সম্পদের মধ্যে রয়েছে- উত্তরার ১৩নং সেক্টরে ৩ কাঠা ১ শতাংশ জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি (নং-৪৭), ১৩নং সেক্টরে ৩ কাঠা জমির ওপর আরও একটি বাড়ি, জোয়ার সাহারায় ১১৪৬ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মিরপুরে টিনশেড বাড়ি ও পল্লবীতে আড়াই কাঠার প্লট, সাভারে ১৫ শতাংশ জমি, ফরিদপুরে ২৩ শতাংশ জমির তিনটি প্লট, কেরানীগঞ্জের খাজা সুপারমার্কেটে ২টি দোকান, বসুন্ধরার ইস্ট ওয়েস্ট আবাসিক প্রকল্পে ৩ কাঠার ২টি প্লট ও ২০০০ সিসির একটি হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের গাড়ি।

এর বাইরেও আবজাল দম্পতির নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। হিসাব দাখিলের পর দুদক পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান করে সেইসব সম্পদের তথ্য বের করবে বলে জানান একজন কর্মকর্তা।

সূত্র বলছে, আবজাল দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড়জন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে পড়াশোনা করেন। ছোট দু’জনের মধ্যে একজন ষষ্ঠ শ্রেণী এবং অন্যজন দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করে গত বছর থেকে দেশে পড়াশোনা করছে। এ দম্পতির ৬ জন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরে কর্মরত।

সূত্র জানায়, স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও লাইসেন্স করে টেন্ডার-বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন আবজাল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্তা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের সঙ্গেও আবজালের যোগসাজশের তথ্য মিলেছে।

আবজাল গত ১ বছরে সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ২৮ বারেরও বেশি সপরিবারে সফর করেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনির পর্টার স্ট্রিট মিন্টুতে তার যে বাড়ি তার দাম দুই লাখ ডলারেরও বেশি। দুদক থেকে ইতিমধ্যে আবজালে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে। তার সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করার জন্য দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে।