বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য

ছয় মাসে ৪৯৬ শিশু ধর্ষণের শিকার

প্রকাশিত: ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০১৯

আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে শিশু ধর্ষণের ঘটনা। চলতি মাসের গত ছয় মাসে ৪৯৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। সর্বনিম্ন আড়াই বছরের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৭ থেকে ১২ বছরের শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি। চলতি জুলাই মাসেই কেবল গত ৭ দিনে ৪১ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ৬ শিশুকে গণধর্ষণ, ৫ প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ এবং তিনজন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ১০ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় উঠে আসা সংবাদের ভিত্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশে শিশু অধিকার ফোরাম।

১৫টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত শিশু অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ পর্যালোচনা করে তৈরি বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের (বিএসএএফ) তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে মোট ৪৯৬ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যা ২০১৮ সালের ১২ মাসে ছিল ৫৭১ জন। গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ৬ মাসে দেশে শিশু ধর্ষণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ হারে, যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৪৯৬ শিশু। যেখানে কি না গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ সংখ্যা ছিল ৩৫১ জন। এপ্রিল এবং মে এ দুই মাসেই শিশু ধর্ষণ হয়েছে ২৪১ টি যা কি না মোট ধর্ষণের অর্ধেকেরও বেশি।

 

চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ধর্ষণ হওয়া ৪৯৬ শিশুর মধ্যে ৫৩ শিশুকে গণধর্ষণ এবং ২৭ প্রতিবন্ধী শিশুকে ধর্ষণ এবং ২৩ জন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া ঐ ছয় মাসে ৭৪টি শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাত্ প্রতি মাসে গড়ে ৮০টির অধিক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফ-এর তথ্য অনুযায়ী গত চার মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ‘বিএসএএফ’ মনে করে শিশু ধর্ষণের প্রকৃত সংখ্যাটা আরো অনেক বেশি। যা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ শহিদ মাহমুদ বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনা প্রতিহত করতে আরো ত্বরিত হস্তক্ষেপ এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও দপ্তরকে অনুরোধ করছি।

তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যে, শিশু যৌন নির্যাতন বন্ধে দ্রুত বিচারের আওতায় মামলাগুলো নিতে হবে। প্রচলিত আইন সংশোধন করে শিশু ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সেই সঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে। বিষয়টি এখন আর কোনোভাবেই উপেক্ষা করার পর্যায়ে নেই। শিশু ধর্ষণের অপরাধ জামিন অযোগ্য করা খুবই জরুরি। প্রতিটি শিশু যেন নিরাপদে তার শৈশব কাটাতে পারে, সে পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রশাসন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতন ও অধিকতর দায়িত্বশীল আচরণ এখন সময়ের দাবি।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম সম্প্রতি শিশুদের প্রতি চলমান সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করে এ ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, অভিভাবক, শিশুসংগঠন, মানবাধিকার সংস্থা, স্কুল-কলেজ এবং পাড়ার তরুণদের সম্মিলিতভাবে এ অপরাধ ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা অসহনীয় অবস্থায় উপনীত হয়েছে। শিশু ধর্ষণের ঘটনায় শিশুর শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জীবনে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।