আ’লীগের সাবেক এমপি আউয়ালকে দুদকে তলব

প্রকাশিত: ২:১৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২০, ২০১৯

জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এমপি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএমএ আউয়ালকে তলব করেছে দুদক। ২৩ মে সকালে তাকে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহম্মেদের সই করা নোটিশে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং অবৈধভাবে সেতু-ফেরিঘাট ইজারা নেয়াসহ টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক এমপি আউয়াল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘জীবনে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। অতএব এ নিয়ে আমার কোনো টেনশনও নেই। তাছাড়া দুদকের কোনো নোটিশ আমি পাইনি। নোটিশ পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’

পিরোজপুরের সদর আসনের দু’বারের এমপি আউয়াল সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি। ২০০৮ সালের জামায়াতের জায়ান্ট প্রার্থী, যুদ্ধাপরাধ মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে হারিয়ে এমপি হন আউয়াল। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। স্ত্রী লায়লা ইরাদের নামে লাইসেন্স করে পিরোজপুরের প্রায় সব দফতরের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেন আউয়াল।

এ নিয়ে আপন ভাইদের সঙ্গেও তার বিরোধ সৃষ্টি হয়। ২০১৬ সালের অক্টোবরে তার ভাই পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের সঙ্গে বেকুটিয়া ফেরিঘাটসহ অন্য আরেকটি সেতুর টোল আদায়ের টেন্ডার নিয়ে বিরোধে উচ্চ আদালতে রিট পর্যন্ত হয়।

রিটে তৎকালীন এমপির অবৈধ হস্তক্ষেপে কম মূল্যে টেন্ডার দেয়ার ঘটনায় সরকারের ৬২ লাখ টাকার রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ উঠে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে বেপরোয়া টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আনেন সহোদর ভাই মেয়র মালেক।

সংবাদ সম্মেলনে মালেক বলেন, ‘টাকা ছাড়া একপাও নড়েন না এমপি আউয়াল।’ ২০১৬ সালের আগস্টে একইভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমপি আউয়ালের বিরুদ্ধে বেপরোয়া অনিয়ম-দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি এবং শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের বর্ণনা দেয় পিরোজপুর জেলা ও পৌর ছাত্রলীগ। সবশেষ ২০১৮ সালের মে মাসে পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার এক ব্যবসায়ীর জাহাজ দখলের অভিযোগ উঠে আউয়ালের বিরুদ্ধে। সে সময় জাহাজ দখলের বিষয়ে অনুসারী ক্যাডারদের মোবাইল ফোনে দেয়া নির্দেশনার কথোপকথন ফাঁস হয়ে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এছাড়াও সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের ১০ বছরে বিভিন্ন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সোনার নৌকা, কোট পিনসহ বহু মূল্যবান উপহারসামগ্রী গ্রহণ, পিরোজপুরে বিপুল ভূ-সম্পত্তির মালিক হওয়া, রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাড়ি, একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট, জাহাজ এবং বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এ এমপির বিরুদ্ধে। ২০০৮ সালে এমপি হওয়ার সময় দাখিল করা হলফনামা এবং ২০১৪-এর ভোটে হলফনামায়ও তার সম্পদের হঠাৎ উল্লম্ফনের প্রমাণ মেলে।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, বিভিন্ন সময়ে সাবেক এ এমপির অনিয়ম-দুর্নীতি, বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হওয়া এবং এমপি থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহারের বহু অভিযোগ জমা পড়েছে কমিশনে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও তার অবৈধ সম্পদের বিবরণ এসেছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহম্মেদকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় আউয়ালের জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে। একই সঙ্গে তাকে দুদক কার্যালয়ে তলবের সিদ্ধান্ত হয়।

জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়া দুদক উপ-পরিচালক সৈয়দ আহম্মেদ বলেন, ‘নোটিশে যা আছে তা আপনারা জানেন। এর বাইরে আমার আর কিছুই বলার নেই। নির্ধারিত তারিখে উনি (আউয়াল) হাজির হয়ে জবাব দেয়ার পর বিধি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব আমরা।’

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এমপি আউয়াল বলেন, ‘আমি এখনও নোটিশ পাইনি অথচ আপনারা সাংবাদিকরাসহ সারা দেশ বিষয়টি জানে। এখানেই তো আমার প্রশ্ন। সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি কোনো অন্যায় করিনি। যদি এরকম কোনো অভিযোগ আনা হয় তাহলে তা হবে সর্বৈব মিথ্যা। কেউ বা কোনো মহল হয়তো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। নোটিশ পাওয়ার পর আমি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তাছাড়া আমি বর্তমানে অসুস্থ। সুস্থ না হয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারব না।’