আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ গণতন্ত্রের স্বাদ পায়

প্রকাশিত: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৮, ২০১৯

বিভিন্ন সময় আ’লীগকে ধ্বংসের চেষ্টা হয়েছে * ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সৃষ্ট দলের ক্ষমতা ছাড়া অস্তিত্বই থাকে না


আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই এ দেশের মানুষ সত্যিকারভাবে গণতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি অর্জনের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ এ আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে।

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে শেষ করার জন্য আইয়ুব খান চেষ্টা করেছে, ইয়াহিয়া খান চেষ্টা করেছে, জিয়াউর রহমান চেষ্টা করেছে, এরশাদ চেষ্টা করেছে, খালেদা জিয়াও চেষ্টা করেছে কিন্তু আওয়ামী লীগের শিকড় বাংলার মাটিতে জনগণের সঙ্গে এমনভাবে প্রোথিত যে, এটাকে কখনও শেষ করতে পারেনি। বরং আজকে এটা প্রমাণ হয়েছে, যে রাজনৈতিক দল জনগণের কথা বলে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে গড়ে ওঠে সেই দলই হচ্ছে প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল সৃষ্টি হয় তাদের গোড়ায় কোনো মাটি থাকে না। ক্ষমতা ছাড়া তাদের কোনো অস্তিত্বই থাকে না।

শেখ হাসিনা বলেন, যেদিন বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম ওই দিন বিএনপির অর্থমন্ত্রী বলেছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ ভালো না। তাহলে বিদেশ থেকে সাহায্য পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ভিক্ষা করা যাবে না। এ ছিল তাদের মানসিকতা। কারণ তারা তো বাংলাদেশের স্বাধীনতাতেই বিশ্বাস করেনি। তাহলে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি তারা আনবে কেন? ভিখারি জাতি হিসেবে থাকুক সেটাই তারা চেয়েছে। আর জাতির পিতা বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। আজকে আমাদের কেউ করুণার চোখে দেখে না। ভিক্ষুক জাতি হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ মানেই দুর্যোগের দেশ মনে করে অবহেলার চোখে দেখে না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে এ ১০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। কেউ আর বাংলার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ। ইনশাআল্লাহ বঙ্গন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারব। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। আর এটা করতে হলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই হচ্ছে একমাত্র সংগঠন যারা জাতির সেবা করে। সেই কথা মনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ঘাতকরা শুধু জাতির পিতাকেই হত্যা করেনি। তার পরিবারের সবাইকেই হত্যা করেছে। আমি সবাইকে হারিয়েছি। ১০ বছরের ভাইটিকেও তারা ছাড়েনি। অর্থাৎ তারা চেয়েছিল ওই রক্ত যেন আর বাংলাদেশের দায়িত্ব নিতে না পারে বা তাদের ঘিরে আওয়ামী লীগ যেন দাঁড়াতে না পারে। এটাই ছিল তাদের চক্রান্ত। কিন্তু আমরা দুই বোন ঘটনাচক্রে বেঁচে যাই। ৬টা বছর দেশে আসতে পারিনি। আমাদের আসতে দেয়া হয়নি। কারণ ’৭৫-এর পরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল শুরু হয়। সংবিধান লংঘন করে হত্যা, ক্যুর মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়েছিল। ১৯টা ক্যু হয়েছিল। আমাদের সামরিক বাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা করা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা অফিসার প্রায় সবাইকে মেরে ফেলা হয়। তারপর প্রতি রাতে কারফিউ। কারও স্বাধীনভাবে চলার কোনো অধিকার ছিল না। প্রায় ১০ বছর শুধু কারফিউ দিয়েই দেশ চালানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়। ঋণখেলাপি, দুর্নীতি এটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়। একটা পর্যায়ে কতগুলো দল করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে মানুষের ভোটের অধিকার ছিল না। কথা বলার অধিকার ছিল না। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। মার্শাল ল’ অর্ডিন্যান্স জারি করে সংবিধানকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। এভাবেই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। আমাদের দুর্ভাগ্য হল- যখন দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছিল তখন অনেকেরই ভালো লাগেনি। যখন মার্শাল ল’ এলো, কথায় কথায় ডাণ্ডার বাড়ি তখন হুজুর ডেকে, আহ বেশ বেশ করতে লাগল। খোশামোদি, তোশামোদি, চাটুকারের দল সৃষ্টি হয়েছিল। তারা সামরিক শাসকদের পদলেহন করত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মার্শাল ল’ দিয়ে দেশ চালায়, প্রতি রাতে কারফিউ থাকে যতই রাজনৈতিক দল করতে দিক না কেন সে দেশে আবার গণতন্ত্র থাকে কি করে?

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর যারা কখনও সরাসরি, কখনও সরাসরি না এভাবে যারা দেশ চালিয়েছে, গণতন্ত্রের বড় বড় কথা বললেও দেশের মানুষ কী পেয়েছিল, দেশের কী উন্নতিটা হয়েছে, আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে কী উন্নতি করেছে? দেশকে তো ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হতো। এমনকি যে সেনাবাহিনীর ঘাড়ে বন্দুক রেখে এরা ক্ষমতা দখল করেছে সে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তাদেরই বা কী উন্নতি করেছে? কিছুই করেনি। এ দেশের মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান কোনো দিকে তাদের নজর ছিল না। তাদের নজর ছিল নিজেরা ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ভোগ করবে, অর্থশালী, সম্পদশালী হবে। আর একটা এলিট গ্রুপ সৃষ্টি করবে যারা তাদের খালি বাহবা দেবে। সেই তোষামোদি চাটুকারের দলই সৃষ্টি করেছিল।

স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বাকশাল গঠনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করে একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। এ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ, অনেকে বাকশাল হিসেবে বলে। তিনি দেশের সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসেন। আমাদের সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ বাহিনী থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানকে একটা প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে দেশের আর্থ সামাজিক কাজে তাদের সম্পৃক্ত করেছিলেন। এজন্যই তিনি এ জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন।