সম্পদের পাহাড়ে সাহা দম্পতি, দেশত্যাগের চেষ্টায় মলয় সাহা

প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০১৯

সরাসরি বিদেশের মাটিতে নিজের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিমূলক তথ্য’ দেয়া নতুন কোন ঘটনা নয়। আর এমন ঘটনা যদি ঘটান দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সদর দফতরের উপপরিচালক মলয় কুমার সাহা স্ত্রী প্রিয়া সাহা, তখন হয়তো এ নিয়ে আপত্তি ওঠার সম্ভাবনা একটু বেশিই। কারণ, এরইমধ্যে একাধিকবার বিদেশে আপত্তিকর তথ্য দিয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে চেষ্টায় বিদেশে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়েছেন বার বার। তার এই কর্মকাণ্ড এখানেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। তার একাংশ ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে চলে বাংলাদেশকে বিতর্কিত করার চেষ্টাও। সবশেষ বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাংলাদেশে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন তিনি।

সাংবাদিক ও এনজিও কর্মকর্তাদের মতে, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুবিধা অর্জনের চেষ্টায় এমনটা করেন প্রিয়া সাহার মতো সুবিধাবাদীরা।

অভিযোগ আছে, ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকায় অবস্থায় বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য গতবছর প্রিয়া সাহাকে বহিষ্কার করে সংগঠনটি। শুধু তাই নয়, নিজ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার নাটক সাজিয়ে প্রচুর বিদেশি অর্থ সংগ্রহ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ইতিমধ্যে দেশত্যাগের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়া সাহার স্বামী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মলয় সাহা। এ লক্ষ্যে তিনি তিনবার ছুটির আবেদন দিয়েছিলেন। তবে দুদক প্রশাসন তার আবেদন মঞ্জুর করেনি। মলয় সাহার পাসপোর্টে মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্র সফরের সিল থাকায় গোপনে এখন তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করে দেশ ও সরকার বিরোধী তৎপরতার বিষয়টি প্রিয়া সাহার দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার ফসল। এ ধরণের তৎপরতার পর তিনি যদি দেশে ফিরতে না পারেন এ লক্ষ্যে স্বামী-সন্তানসহ ওই দেশেই থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। কারণ, সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে নালিশ জানানো এবং সহযোগিতার পর বাংলাদেশে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে- সেটি তিনি জানতেন। অত্যন্ত সচেতনভাবে প্রিয়া সাহা এটি করেছেন। এটির জের স্বামী মলয় সাহার ওপরও বর্তাবে- এটিও নিশ্চিত ছিলেন তিনি। ফলে প্রিয়া-কান্ডের পরপরই পর্দার অন্তরালে চলে যান মলয় সাহা। তার ব্যবহার্য মোবাইল নম্বরটি কখনো বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আবার কল হলেও ওই প্রান্ত থেকে কেউ ধরছে না। যাবতীয় তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও। শো করছে না ইমু আইডিও। এ ছাড়া সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়ে তার কক্ষে গিয়েও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিয়া সাহার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই অফিস করছেন না মলয় সাহা। কোনো ছুটিও নেননি। সংস্থার সব কর্মকর্তা-কর্মচারির মুখে মুখে শুধু মলয় সাহা ও প্রিয়া সাহা । সেই সঙ্গে রয়েছে প্রিয়া সাহার প্রতি ধিক্কার ও ঘৃণা। বিশেষ করে প্রিয়া সাহার এ ঘটনার পর স্বামী মলয় সাহা দুদক কর্মকর্তা হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি আবারো নেতিবাচক ভাবে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে। মলয় সাহা আত্মগোপনে থেকে দেশত্যাগের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার মলয় সাহা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি দুদক প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা। এমনকি তার ঘনিষ্ট সহকর্মীরাও তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে না রাজ।

এদিকে প্রিয়া এবং মলয়স সাহার দুই কন্যা প্রজ্ঞা পারমিতা সাহা ও ঐশ্বর্য লক্ষèী সাহা যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করলেও বর্তমানে বাংলাদেশেই অবস্থান করছে বলে জানাগেছে। মলয় সাহা তাদের সঙ্গে নিয়েই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি আত্মগোপনে রয়েছেন। গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিতে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছেন। যদিও মলয় সাহার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের অভিযোগ আনা হয়নি। কোনো মামলাও দায়ের হয়নি। তবে তার কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার এবং সেই লক্ষ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা হন্যে হয়ে খুঁজছে বলে জানায় সূত্র।