শক্ত অবস্থানে প্রতিবাদী তারকারা, তোপের মুখে প্রিয়া সাহা ও তার সংগঠন

প্রকাশিত: ৮:৪৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৩, ২০১৯

‘কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ?  তার গন্তব্য কোথায়?’ এমন প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

প্রতিদিন ঘটছে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা। প্রকাশ্যে হত্যা, ঘুম, খুন, দূর্নীতি। বাংলাদেশে অপরাধের মাত্রা যেমন বাড়ছে, তেমনি বেড়েছে জনসচেতনতা। অতি সচেতনতা আবার পরিণত হচ্ছে গুজবে। দেশের চলমান ‘ছেলেধরা’ গুজবে ইতিমধ্যে গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছে ৭ জন এমং গণপিটুনির শিকার হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এসব কিছুর নেপথ্যে বিচার ব্যবস্থাকেই দায়ী করছেন সাধারণ জনগণ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পকে দেয়া প্রিয়া সাহার মিথ্যা ভিত্তিহীন নালিশকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বজুড়ে বইছে সমালোচনার ঝড়।

প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশে ৩৭ মিলিয়ন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১৮ মিলিয়ন সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমরা আমাদের দেশ ছাড়তে চাই না। শুধু আমাদের বাংলাদেশে থাকার জন্য সাহায্য করুন।’

প্রিয়া সাহার এমন মিথ্যা অভিযোগের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে দেশ-বিদেশে থাকা সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ শুরু করে।

প্রিয়া সাহার এমন রাষ্ট্রদোহী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে
বিভিন্ন জেলায় মানববন্ধন করেন দেশের সর্বোস্তরের জনগণ। অনলাইনে প্রতিবাত শুরু করেন দেশে বিদেশে থাকা বিভিন্ন তারকারাও। ফেসবুক ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যে যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন। ফলে তোপের মুখে পড়ে প্রিয়া সাহা ও তাদের সংগঠন।

বিশ্বব্যাপী এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ২২ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’ প্রিয়া সাহাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়।

প্রিয়া সাহাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান, ফেসবুকের এক আলোচিত ব্যক্তি আসাদ পং পং। তিনি তার ফেসবুক লাইভে বলেন, প্রিয়া সাহা যা করেছেন তা স্পষ্ট দেশদ্রোহীতা, প্রিয়া সাহাকে ভারতে গুপ্তচর হিসেবেও দেখছেন তিনি। প্রিয়া সাহাকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত তার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

২০ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ট্রাম্পের কাছে দেয়া প্রিয়া সাহার মিথ্যা নালিশকে উদ্যেশ্যপ্রণদিত আখ্যায়িত করে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। দেশদ্রোহী হিসেবে প্রিয়া সাহার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবাইদুল কাদের।

গত ২১ জুলাই রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যরিস্টার সুমন প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহী মামলা করলেও দুপুরে তা খারিজ করে আদালত।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের যে অভিযোগ প্রিয়া সাহা করেছেন, সেটি‘ছোট্ট ঘটনা’।
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্য রহস্যজনক হিসেবে দেখছেন বিশিষ্টজনরা।

২২ জুলাই সোমবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কটূক্তির অভিযোগে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

অ্যাডভোকেট সুমন কুমার রায়ের সহযোগীতায় রাজধানীর ভাসানটেকের গৌতম কুমার এডবর নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেন।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমাকে মামলা দিয়ে তারা প্রমান করছে এ দেশে তারা স্বাধীন। এদেশে তাদের অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়।

একুশে টেলিভিশনের সাবেক রিপোর্টার ইলিয়াস হুসাইন বলেন, প্রিয়া সাহা যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা সুস্পষ্ট দেশদ্রোহিতা। বাংলাদেশ নিয়ে প্রিয়া সাহার এমন মিথ্যা ষড়যন্ত্রে ভারতের পৃষ্ঠপোষকতা আছে বলে ধারণা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, প্রিয়া সাহার ব্যাপারে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য একজন রাষ্ট্রদ্রোহীকে বাঁচিয়ে দেয়ার নামান্তর। সোমবার তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক লাইভে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে বিশেষ এক মহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাই তিনি সবাইকে সজাগ থাকতে বলেন এবং দেশের সকল মানুষকে দলমত নির্বিশেষে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সার্বোভৌমত্ব রক্ষায় একসাথে কাজ করার আহবান জানান।

রাজনৌতিক বা ব্যক্তিগত কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আদৌ বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কোনো ঘটনা না ঘটলেও বাংলাদেশে অমুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠন চোখে পরার মতো। এ নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের।  বাংলাদেশে যেখানে মুসলিমদের সাথে অমুসলিমরা নির্বিঘ্নে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে সেখানে তাদের রক্ষার্থে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি অযৌক্তিক বলে মনে করছেন অনেকে।

অনলাইনের এক আলোচিত ব্যক্তিত্ব ‘সুস্ময় শরিফ’ বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিশ্বের একমাত্র দৃষ্টান্ত যা নষ্টে ব্যাপক ষড়যন্ত্র চলছে । যেখানে সেখানে সাম্প্রতিক সংগঠন গড়ে তোলাকেও এক প্রকার ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ এক অসাম্প্রদায়িক দেশ, যে দেশে স্বাধীনতা এসেছে হিন্দু – মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, আজও আমাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। নেই কোনো আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এমন সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বিনষ্টকারী ষড়যন্ত্র রুখতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।