রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে অনৈতিক ব্যবসায়িক চর্চা, শঙ্কা টিআইবির

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০

কোভিড-১৯ উদ্ভূত সংকটে জর্জরিত জাতির এই ক্রান্তিকালে জবাবদিহিতাহীন স্বেচ্ছাচারের একের পর এক উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আইনের শাসনের স্বার্থে এখনই এই প্রবণতার লাগাম টেনে ধরার জোরালো দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ত দায়হীনতা ‘গাফিলতি’ ও একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে বেআইনিভাবে ঋণ সুবিধা আদায়ের জন্য গুলি করার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তদের এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে দেশ ছাড়তে পারার মতো ঘটনাকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ব্যবসায়িক দুর্বৃত্তায়ন বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।

গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলছে, বহুল আলোচিত ওই দুই ঘটনার পাশপাশি আসন্ন বাজেটে পাচারকৃত অর্থসহ কালো টাকাকে বৈধতা প্রদানের সুবিধা আরও বিস্তৃত করার যে পরিকল্পনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে

চ্চ ক্ষতিপূরণসহ আইনের কঠোরতম প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। মুনাফার পাশাপাশি চিকিৎসাসেবার মহতি উদ্যোগ থেকেই এসব বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে এমনটাই আমরা বিশ্বাস করতে চাই। কিন্তু ‘সেবার’ বিষয়টি কেবল সাইনবোর্ড সর্বস্ব হবে, আর ব্যবসায়িক লাভালাভের বিবেচনার কাছে চিকিৎসাপ্রার্থী হেরে যাবেন, গাফিলতির কারণে তাদের প্রাণ যাবে- এটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না।”

‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূলভিত্তি আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগ’ এমন মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “সম্প্রতি অবৈধ ঋণ পাইয়ে দিতে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাকে গুলি করা, একাধিক কর্মকর্তাকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগে মামলার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে। অথচ যাদের বিরুদ্ধে মামলা তারাই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ‘প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়’ ‘মিথ্যা রোগী সেজে’ ‘এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে’ দেশ ছাড়লেন। ‘তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়নি’ এমন অজুহাতে এখানে দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে বিশ্বজুড়ে আকাশপথে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ থাকার পরও যে-রকম অস্বাভাবিক দ্রুততায় পুরো আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের দেশছাড়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এবং এখন সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর যেভাবে দায়িত্ব দিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে, তাতে অবৈধ যোগসাজশের আশঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে। অনৈতিক ব্যবসায়িক সুবিধা নিয়ে দেশের ব্যাংকিং খাতকে প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। বরাবরের মতো এবারও যদি তারা সরকারের ‘প্রত্যক্ষ মদদে’ দায় মুক্তি পেয়ে যান, সেটা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘শূন্য সহনশীলতা নীতির’ সরাসরি বরখেলাপ।”

সরকারের সামগ্রিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘ঘোষিত অবস্থান’ কেবল তার বক্তব্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যাচ্ছে কি-না, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি।

ড. জামান বলছেন, “করোনা সংকটের এই ক’মাসে আমরা একের পর এক যতগুলো ঘটনা দেখলাম তাতে এই আশঙ্কা একেবারে অমূলক— এমনটা দাবি করার মতো অবস্থা নিশ্চিতভাবেই সরকারের নেই। এরই মধ্যে আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে যে, আসন্ন বাজেটে আবারও কালো টাকা সাদা করার সুযোগই কেবল দেয়া হচ্ছে না, বরং পাচারকৃত অর্থসহ এর আওতা আরও বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। দুর্নীতি দমনের ঘোষণা আর দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে বৈধতা দেয়া শুধু পরস্পর বিরোধী নয়, বরং অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক। বছরের পর বছর এই সুবিধা দিয়ে দেশের অর্থনীতির কোনো দৃশ্যমান উপকার হয়নি, উল্লেখযোগ্য কোনো বিনিয়োগ হয়নি। অথচ অনৈতিকতা প্রশ্রয় পেয়েছে আর সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমন বাস্তবতায় সরকারকে এই আত্মঘাতী পদক্ষেপ থেকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, দেশের সরকার এখনও মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষীদের হাতে জিম্মি হয়ে যায়নি।”