মুরসির মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ-নিন্দা, শোক

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০১৯

মিসরে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুতে শোকাহত মুসলিম বিশ্বের নেতারা।

 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ও মুসলিম ব্রাদারহুড তাকে শহীদ আখ্যা দিয়ে তার রুহের মাগফিরতা কামনা করেছে।

মুরসির মৃত্যুতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, রাষ্ট্রপ্রধান ও নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। সাবেক এ প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোক প্রকাশ করতে দেখা গেছে বহু সাধারণ মানুষকেও।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, আমাদের কাছে মোহাম্মদ মুরসি শহীদ। ইতিহাস সেই (সিসি) একনায়ককে ক্ষমা করবে না, যে কিনা জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে জেল দিয়েছে, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্যাতন করেছে এবং তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

 

মুরসির আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন কাতারের শাসক শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এক টুইটে কাতার আমির বলেন, মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুরসির আকস্মিক মৃত্যুর খবর আমরা গভীর বেদনার সঙ্গে গ্রহণ করেছি। তার পরিবার ও ভ্রাতৃপ্রতীম মিসরীয়দের প্রতি আমরা গভীর শোক শোক জানাচ্ছি।নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তার কাছে সবাইকে ফিরে যেতে হবে।

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক মুরসির আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকদের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।

মিশরের ইতিহাসে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসির মৃত্যুকে সরাসরি হত্যাকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছে তার দল মুসলিম ব্রাদারহুড।

তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধীরে ধীরে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা দ্য ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি।

এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, মুরসিকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। দুর্গন্ধযুক্ত খাবার খেতে দেয়া হয়েছে। মৌলিক মানবাধিকারের সবকিছু থেকে তাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। আর এতে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাকে।

মুরসির মৃত্যুতে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের নিকটতম বন্ধু হারিয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, মুরসি জীবনভর সংগ্রাম করেছেন মিশর ও দেশটির জনগণের জন্য, তার সংগ্রামের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও (এইচআরডব্লিউ) মুরসির মৃত্যুর বিষয়টিকে পরিকল্পিত হত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

সংস্থাটির জানিয়েছে, কারাবন্দি মুরসিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না দিয়ে মিশরের সরকার তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এক টুইট বার্তায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক পরিচালক সারাহ লি উইটসন বলেন, মুরসির মৃত্যুর ঘটনা ভয়ঙ্কর। মিসরের সেনাশাসিত সরকার মুরসিকে বছরের পর বছর বিনা চিকিৎসায় কারাবন্দি করে রেখেছে। কারাবন্দি অবস্থায় তাকে চিকিৎসা বা ওষুধ খেতে দেয়া হয়নি। এমনকি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি, তার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করতেও দেয়া হয়নি।

মুরসির মৃত্যুর বিষয়ে নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত করতে জাতিসংঘের কাছে দাবি জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই কর্মকর্তা।

মুরসির মৃত্যুকে বেদনাদায়ক ও দুর্ভাগ্যজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মুসাবি।

মুরসির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জর্ডানের সাবেক রানী নূর আল হুসাইন।

মঙ্গলবার টুইটারে মুরসির প্রশংসা করে নূর আল হুসাইন লেখেন, তার কিসের চিন্তা? নিশ্চিন্তে প্রশান্তির ঘুম ঘুমাক তিনি। মুরসি মিসরের সর্বপ্রথম এবং একমাত্র গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট।

এদিকে মুরসির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ফিলিস্তিনিদের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে আসে। সোমবার বিকালেই জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গনে মুরসির গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় অংশ নিতে ফিলিস্তিনিদের ঢল নামে।

মিসরের শহীদ সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির গায়েবানা জানাজায় অংশগ্রহণ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান।

মিসরে মুরসির জানাজার সময়ে সঙ্গে মিল রেখে মঙ্গলবার তুরস্কে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সূত্র: আল জাজিরা, এএফপি, আনাদোলু, ডেইলি সাবাহ