‘মিস্টার নুর ভালো আছেন, চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই’

প্রকাশিত: ৪:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৯

‘মিস্টার নুর ভালো আছেন। আজ হঠাৎ তিনি বললেন যে তার কনুইয়ে ব্যথা। আমরা তার এক্সরে করেছি। রিপোর্ট ভালো আসলে আমরা তাকে আজই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেব। এ ছাড়া আরও ২-৩ জনকে আজ ছেড়ে দেয়া হবে।’

বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এ কে এম নাসির উদ্দিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরসহ হাসপাতালে ভর্তি শিক্ষার্থীদের অবস্থা জানাতে বৃহস্পতিবার ঢামেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

 

‘শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লুকোচুরি করছে’,- শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘তাদের চিকিৎসা নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। আমরা তাদের জন্য মোট ১৩ জনের একটি বড় মেডিকেল বোর্ড (প্রথমে ৯ জন পরে পর্যায়ক্রমে বোর্ডে ৪ জন সংযুক্ত) গঠন করি। এতো বড় বোর্ড আগে কখনও হয়নি। তাদের যার যা চিকিৎসা প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে সেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তুহিন ফারাবীর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তার এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরেও অতিরিক্ত দর্শনার্থীর কারণে তার ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে এইচডিইউতে রাখা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ভালো হচ্ছে, এ নিয়ে আমরা ১০০% কনফিডেন্ট।’

 

গত ২২ ডিসেম্বর নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর ফের হামলা চালান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। হামলায় অন্তত ৩২ জন আহত হন।

সংবাদ সম্মেলনে একে একে সবার শারীরিক অবস্থা ব্রিফ করেন পরিচালক। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসাধীন সোহেলের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে নেয়া হবে। তুহিন ফারাবীর মাঝে মাঝে শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধা হয়। এ ছাড়াও আমি দেখেছি তিনি ভয়ে থাকেন, প্যানিক হয়ে যায়। তিনি বর্তমানে শান্ত রয়েছেন। ২-১ দিনের মধ্যে তাকে ওয়ার্ডে দেয়া হবে।’

‘আমিনুরের মাথায় আঘাত ছিল। আমরা তা পরীক্ষা করে তার কিডনিতে ইনফেকশন পেয়েছি। তাই তাকে নেফ্রোলজি বিভাগে (কিডনি বিভাগ) স্থানান্তর করা হবে। চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসানের ব্লাড প্রেসার একটু বেশি।’

ফারুক হাসানের বিষয়ে পরিচালক বলেন, ‘ফারুকের কানে একটু সমস্যা ছিল। তাকে নাক-কান-গলা এবং অর্থপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসকরা দেখেছেন। তাকে আজই ছেড়ে দেয়া হবে। তবে ১ সপ্তাহ পর তাকে ফলোআপের জন্য নাক-কান-গলা বিভাগ ও ২ সপ্তাহ পর অর্থপেডিক্স বিভাগে আসতে হবে।’

‘নাজমুল মোটামুটি সুস্থ। তাকে আজ রিলিজ দেয়া হবে। আরিফের চোখে সমস্যা এবং ব্লাডপ্রেসার বেশি। তিনি পর্যবেক্ষণে আছেন।’

আহতদের চিকিৎসায় গঠিত ১৩ সদস্যের বোর্ডের চিকিৎসকরা হলেন- নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রাজিউল হক, অ্যানেস্থেসিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মোজাফফর হোসেন, নাক কান ও গলা বিভাগের অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদ, চক্ষু বিভাগের অধ্যাপক আনিছুর রহমান, ওরাল অ্যান্ড ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক রুহুল আমিন, সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হক মাসুম, অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলম, নেফ্রোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, নিউরো মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কনোল সাহা, মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতলেবুর রহমান, কার্ডিওলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল হক শাহীন ও ঢামেকের সহকারী পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ।

গত রোববারের হামলার ঘটনায় নুর-ফারাবীসহ আহত ছয়জনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ফারাবীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তবে পরদিন সকালে জানানো হয়, শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়া হয়েছে।

হামলার দিন সন্ধ্যায় আহত নুরকে দেখতে হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তবে হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তারা।

এদিকে ওই হামলার ঘটনায় সোমবার দুপুরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে গ্রেফতার করা হয়।

নুরদের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০ থেকে ৩৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।